রণজিৎ বিশ্বাসের "আমার আলো আমার আঁধার" একটি আত্মজৈবনিক রচনাধর্মী বই, যেখানে লেখক তাঁর জীবনের বিভিন্ন পর্যায়, সংগ্রাম, সাফল্য, ব্যর্থতা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। এটি কেবল একটি ব্যক্তিগত জীবনের কাহিনি নয়, বরং সেই সময়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকেও তুলে ধরে।
সারমর্ম:
আত্মজীবনের প্রতিফলন:
রণজিৎ বিশ্বাস তাঁর শৈশব, কৈশোর, ছাত্রজীবন ও পেশাজীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন। বিশেষ করে একজন সাধারণ মানুষ থেকে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়ে ওঠার পথের প্রতিটি ধাপ তিনি অকপটে তুলে ধরেছেন।
আলোক ও আঁধারের দ্বন্দ্ব:
বইটির নামের মতোই, এতে আলো (সাফল্য, আনন্দ, ভালোবাসা) এবং আঁধার (কষ্ট, চ্যালেঞ্জ, হতাশা) এই দুই বিপরীত বাস্তবতার সহাবস্থান রয়েছে। লেখক দেখিয়েছেন, জীবনে আলো থাকলেও তা সবসময় নিখুঁত নয়, আর আঁধারও সবসময় নেতিবাচক নয়—উভয়ই জীবনকে পূর্ণতা দেয়।
দার্শনিকতা ও মানসিক জগৎ:
আত্মজৈবনিক হলেও বইটি দার্শনিক চিন্তা-ভাবনায় সমৃদ্ধ। তিনি জীবনের অর্থ, সমাজের মূল্যবোধ, দায়িত্ববোধ ও আত্মানুসন্ধানের ওপর জোর দিয়েছেন।
ভাষা ও শৈলী:
ভাষা সহজ, বর্ণনা গঠনমূলক এবং আবেগপূর্ণ। কখনো কখনো কাব্যিকতা পাওয়া যায়, যা পাঠককে আবেগতাড়িত করে।
উপসংহার:
"আমার আলো আমার আঁধার" কেবল একটি জীবনকথা নয়—এটি একজন মানুষের আত্মসন্ধানের, আত্মদর্শনের এবং সমাজ-সংসারের জটিলতা বুঝে ওঠার প্রয়াস। এটি পাঠকের কাছে আত্মবিশ্বাস, মানবতা ও জীবনের গভীর অর্থ নিয়ে ভাবনার দ্বার খুলে দেয়।
ড. রণজিৎ বিশ্বাস লেখকভুবনে আবির্ভাব ১৯৭৩ সালে। প্রিয় বিষয় মুক্তিযুদ্ধ, মানুষ ও মানবতা নিয়ে প্রায় প্রতিদিন ঢাকা ও চট্টগ্রামের কাগজে প্রবন্ধ-নিবন্ধ, কলাম, রম্যরচনা ও ছোটগল্প এবং ক্রিকেটবিষয়ক প্রবিবেদন ছাপা হলেও মুদ্রিত গ্রন্থসংখ্যা খুব বেশি নয়। আমার প্রথম গল্প উনিশ (অসঙ্কোচ প্রকাশ, অসবর্ণ চার কোণে চারজন), ব্যবহারিক বাংলায় ভ্রমকণ্টক, শুদ্ধ লেখা শুদ্ধ বলা, ব্যবহারিক বাংলা : যত ভুল তত ফুল, ভাষার যত গোলকধাঁধা, গৌরব আমার গ্লানি আমার, মাতৃভূমির মালিকানা, কুড়িয়ে পাওয়া সংলাপ, রম্যকথার এক ঝাঁপি, গল্প গল্প মনে হয় গল্প কিন্তু মোটেই নয়, প্রতিদিনের পথের ধূলায় ও হৃৎকথনের রেণুকণা তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। বাংলা ও ইংরেজি ভাষার ব্যবহারিক শুদ্ধাশুদ্ধি নিয়ে রচনায় ও প্রশিক্ষণে দীর্ঘদিন ধরে তিনি তন্বিষ্ঠতায় শ্রমশীল। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদানকারী ড. রণজিৎ বিশ্বাস মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী শক্তি কর্তৃক উপর্যুপরি চারবার পদোন্নতি বঞ্চিত এক কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি সরকারের সচিব ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিযুক্ত। ড. রণজিৎ বিশ্বাস দু’সন্তানের জনক অভিষেক বিশ্বাস হীরা ও উপমা বিশ্বাস মুক্তা। তাদের জননী শেলী সেনগুপ্ত। একজন শিক্ষক ও গৃহকোণশিল্পী।