‘কোন অলকার ফুল’: একটি বহুমাত্রিক প্রবন্ধসংকলন। আসাদ চৌধুরীর লেখনী যেমন সাবলীল, তেমনি আবেগস্নিগ্ধ ও অন্তর্দর্শী। প্রবন্ধগুলোতে আছে কবিত্বমিশ্রিত গদ্যের মাধুর্য, এবং সেইসঙ্গে বুদ্ধিদীপ্ত বিশ্লেষণ। সাহিত্যিকদের জীবন, সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের অন্তর্দৃষ্টি তাঁর লেখাকে করে তুলেছে আরও ভাবগম্ভীর ও পাঠযোগ্য।
লেখক এই গ্রন্থে ২৬টি প্রবন্ধ সন্নিবেশিত করেছেন। তন্মধ্যে ১৭টি প্রবন্ধে দেশ বিদেশের কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীদের সম্পর্কে তাঁদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে কৃতিত্ব ও অবদানের কথা লেখক সুন্দরভাবে মূল্যায়ন করেছেন। সাহিত্যানুরাগী ও গবেষকদের নিকট গ্রন্থটি সমাদৃত হবে এই আমার বিশ্বাস।
বইটির সূচিপত্র হলো-
সুকুমার রায়
সৈয়দ মুজতবা আলী
বুদ্ধদেব বসু
ফররুখ আহমদ
আলাউদ্দীন খাঁ
জসীমউদ্দীন
নজরুল: আমাদের সর্বশেষ মীথ
হে তপস্বী তুমি একমনা
রবীন্দ্রনাথ ও মুসলমান সমাজ
রবীন্দ্রনাথের রাজনীতি চর্চার একদিক
রবীন্দ্রনাথের রাজনীতি-চর্চার কয়েকটি ধারা
ভিন্ন ধরনের কবিতা প্রসঙ্গে
ভূমিকম্পের কবিতা' এবং মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন
সংস্কৃতির বিকাশধারা
সুলতানের সঙ্গে
মুগ্ধ চোখের বিস্ময়
নাটকের দর্শক বদল
না-দেখা অভিনেতাকে ঘিরে
তিন ঘণ্টার জন্য
যাত্রা প্রসঙ্গে
রাস্তার বাঘ-সিংহ ইত্যাদি
বাংলাদেশের সাময়িকপত্র
আব্বাসউদ্দীন
ফেনায় ফেনায় আলোর নাচন
ফাদার দ্যতিয়েন-এর সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা
মুহাম্মদ এনামুল হকের সঙ্গে কিছুক্ষণ
‘কোন অলকার ফুল’ শুধু একটি প্রবন্ধসংকলন নয়—এটি এক ধরনের সাহিত্যিক আরাধনা। কবি আসাদ চৌধুরী তাঁর অভিজ্ঞতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও ভালোবাসা দিয়ে নির্মাণ করেছেন এক অনবদ্য গ্রন্থ, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পাঠকদের কাছেও হবে সমান প্রাসঙ্গিক ও প্রেরণাদায়ক।
আসাদ চৌধুরী। জন্ম ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩, উলানিয়া, বরিশাল। বাংলাদেশের কবিতায় ‘তবক দেওয়া পান’ নিয়ে আসাদ চৌধুরীর আর্বিভাব। স্বল্পবাক, ঋজু এবং বক্তব্য প্রকাশে পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিকীর্ণ এই কবি, বাংলাদেশের ষাট দশকের কবিতায় সংযোজন করেছেন নতুন মাত্রা। এ মাত্রা লক্ষণীয় তাঁর ভাষা ও প্রকরণে; যেখানে তিনি ঐতিহ্য, শে¬ষ, প্রেম, সৌন্দর্য ও মরমি চেতনার সংমিশ্রণ ঘটান। আসাদ চৌধুরী, তাঁর কবিতায় মরমি-মানসিকতা নিয়ে বাঙালি জাতির ঐতিহ্যকে অনুসন্ধান করেছেন। আর তাই ছন্দে মেজাজে এবং বক্তব্যে তিনি স্বতন্ত্র হয়ে ওঠেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রায় এক যুগ সময়। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে এবং জয়বাংলা পত্রিকায় কাজ করেন। জার্মানির কোলনের ভয়েস অব জার্মানির বাংলা বিভাগের বিভাগীয় সম্পাদক ছিলেন (১৯৮৫-৮৮)। বাংলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন প্রায় ছাব্বিশ বছর। আসাদ চৌধুরী কবিতা আবৃত্তি করেন। বেতার টিভিতে উপস্থাপনা করেন। প্রচুর নাটক সিনেমা দেখেন। ভ্রমণ তার নেশা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোতেই তার আনন্দ। সব বয়সী পাঠকের জন্য কবিতা, প্রবন্ধ লেখার পাশাপাশি বিশেষভাবে ছোটদের জন্য লিখেছেন ছড়া-কবিতা, রূপকথার গল্প, অনুবাদ এবং জীবনীগ্রন্থও। সাহিত্যকর্মে অবদানের জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৭), অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮২), একুশে পদক (২০১৩) সহ অসংখ্য পুরস্কার। সদা হাস্যোজ্জ্বল, প্রাণচঞ্চল চির তারুণ্যের প্রতীক আসাদ চৌধুরী ছোট বড় সকলেরই প্রিয় মানুুষ।