"আজকের দেবদাস" ইমদাদুল হক মিলন রচিত একটি জনপ্রিয় উপন্যাস, যা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস "দেবদাস"-এর আধুনিক পুনর্নির্মাণ বা অনুপ্রেরণালব্ধ রূপ। এই উপন্যাসে মিলন একজন আধুনিক দেবদাসকে তুলে ধরেছেন, যার প্রেম, যন্ত্রণা, সমাজ ও বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে ফুটে ওঠে।
📚 সারমর্ম:
"আজকের দেবদাস" উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র হল দিব্য, যে এক সাধারণ ঘরের ছেলে। সে ভালোবাসে প্রেমিলা নামের এক মেয়েকে। তাদের সম্পর্ক গভীর হলেও সমাজ, পরিবার ও বাস্তবতার নানা জটিলতায় তা পূর্ণতা পায় না। প্রেমিলাকে বিয়ে করতে না পেরে দিব্য ধীরে ধীরে একাকীত্ব, হতাশা ও আত্মবিধ্বংসের পথে হাঁটে।
শরৎচন্দ্রের দেবদাস যেমন মদের আশ্রয়ে নিজেকে ধ্বংস করেছিল, তেমনি মিলনের দিব্যও ধীরে ধীরে এক আত্মঘাতী জীবনের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু মিলনের দেবদাস কেবল একজন প্রেমিক নয়—সে এক সময়ের প্রতিবিম্ব। সে আজকের সমাজ, অবক্ষয়, প্রেমের সংকট, এবং তরুণদের মানসিক সংগ্রামের প্রতীক।
📌 মূল থিম ও বার্তা:
ভালোবাসা ও হারানোর বেদনা
সমাজের রূঢ় বাস্তবতা
আধুনিক প্রেমের টানাপোড়েন
যুবকদের ভেতরের হতাশা ও একাকীত্ব
আত্মনিয়ন্ত্রণ না রাখতে পারলে জীবনের করুণ পরিণতি
✍️ লেখকের শৈলী:
ইমদাদুল হক মিলন তার চিরাচরিত আবেগঘন ও সহজবোধ্য ভাষায় উপন্যাসটি লিখেছেন, যাতে পাঠক খুব সহজেই চরিত্রগুলোর সঙ্গে একাত্ম হতে পারে। আধুনিক সমাজের চিত্র ও ব্যক্তিগত বেদনার মিশ্রণে তিনি এক নতুন "দেবদাস" সৃষ্টি করেছেন।
১৯৫৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বিক্রমপুরের মেদিনীমণ্ডল গ্রামে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের জন্ম। লেখনীশক্তির পাশাপাশি তার রয়েছে নাট্যরচনায় পারদর্শিতা। বর্তমানে বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদপত্র ‘কালের কন্ঠ’-এর সম্পাদক পদেও নিয়োজিত রয়েছেন তিনি। শিশুতোষ গল্প দিয়ে সাহিত্য অঙ্গনে এ গুণী লেখকের প্রবেশ, যা প্রকাশিত হয়েছিলো ‘কিশোর বাংলা’ নামক এক পত্রিকায়। তবে পাঠকের নজরে পড়েছিলেন ‘সজনী’ নামের ছোট গল্প লিখে। খুব অল্প বয়সে তিনি লেখালেখিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। ফলে তার লেখার বিষয়বস্তুতে কোনো জটিল সমীকরণের দেখা মিলতো না, পাঠককে বিমল আনন্দ দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমদিকে তিনি ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ বিষয়গুলোকে পরিহার করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে ইমদাদুল হক মিলন এর বই সমূহ-তে মুক্তিযুদ্ধ, হাজাম সম্প্রদায়ের জীবন, প্রবাসী শ্রমিকদের দুঃখগাথা, পাটচাষী, গ্রাম বাংলার সমাজের এক নিখুঁত চিত্রও ফুটে উঠতে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে লেখকের বক্তব্য, তিনি নিজেই লেখার এরকম বিপরীতধর্মী দুটি ধরন আপন করে নিয়েছেন, আর এক্ষেত্রে তার অণুপ্রেরণা ছিলেন সমরেশ বসু। ইমদাদুল হক মিলন এর বই সমগ্র-তে স্থান পেয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক নাটক এবং প্রায় দু’শো উপন্যাস। শিশুতোষ গল্প এবং ভৌতিক উপন্যাস রচনাতেও তার জুড়ি নেই। এই বৈচিত্র্যপূর্ণ সৃষ্টিশীলতার কারণে বাংলা উপন্যাস ইমদাদুল হক মিলন এর কাছে কৃতজ্ঞ। শুধু বাংলাদেশ না, পশ্চিমবঙ্গেও তার সমান জনপ্রিয়তা রয়েছে। দুই বাংলায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী তার বহুল পঠিত উপন্যাস হলো ‘নূরজাহান’। এছাড়াও ইমদাদুল হক মিলন এর উপন্যাস সমগ্র বিভিন্ন পাঠকপ্রিয় উপন্যাসে ঠাসা। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো ‘জিন্দাবাহার’, ‘নিঝুম নিশিরাতে’, ‘যাবজ্জীবন’, ‘কালাকাল’, ‘কালো ঘোড়া’, ‘ভূমিপুত্র’, ‘পরাধীনতা’, ‘কে’, ‘তাহারা’, ‘ভূতের নাম রমাকান্ত কামার’ ইত্যাদি। দেশি-বিদেশি নানা সম্মানজনক পুরস্কারের পাশাপাশি ২০১৯ সালে তিনি একুশে পদক পান।