"শহীদ কাদরী সময়ের সম্পন্ন স্বর" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ বিশশতকের একজন শক্তিশালী কবি শহীদ কাদরী, যিনি অনায়াসে উঠে এসেছেন আমাদের ভাষার প্রধানদের তালিকায়। যদিও তাঁর লেখার পরিমাণ খুব বেশী নয়, কিন্তু পরিমাণ দিয়ে সাহিত্যের মান নির্ণয় কোনাে কালেই হয়নি। কবিতার গভীরতা, অনুপ্রাস, উপমা, চিত্রকল্প, আধুনিক মননের শৈল্পিক বিন্যাস ও সর্বোপরি শব্দের স্বতন্ত্র ব্যবহার তাঁকে বাংলা ভাষার বিশিষ্টদের মাঝে নিয়ে এসেছে। আপাদমস্তক এই বাঙালি কবি প্রায় চার দশক ছিলেন দেশের বাইরে। তার লেখালেখিও ছিলাে প্রায় স্তিমিত। কিন্তু একদা তিনি যা সৃষ্টি করেছিলেন তাতেই তিনি বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন। তাঁর সম্পর্কে কবি-গল্পকার-প্রাবন্ধিক জ্যোতির্ময় দত্ত লিখেছেন, “তাঁর কবিতা পরম্পরা অব্যর্থ ভাবে পাঠককে পৌছে দেয় এমন এক নাস্তিবাদে, যে শূন্যতাবােধের তুলনায় এমন কি সুধীন্দ্রনাথকেও মনে হয় পরম আস্তিক। ...কাব্যশৈলীতে তাঁর ভার্চুয়ােসিটির জুড়ি বিরল। ষাটের দশকে ঢাকায় এক নাগরিক, আধুনিক সংশয়ী মানসের উন্মেষ ঘটছিলাে...ওই সময় ও পরিবেশে এরকম একজন আন্তর্জাতিক কবির আবির্ভাব সমাজতত্ত্বের সব গণিতকে অপ্রমাণ করে দেয়।” কবি হাসানআল আব্দুল্লাহ তাঁকে নিয়ে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। সাক্ষাৎকার, কাব্যালাপ, মূল্যায়ন, চিঠিপত্র ও তাঁর কবিতার অনুবাদ দিয়ে তিনি সাজিয়েছেন এই বই, যার প্রথম সংস্করণ শেষ হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। দ্বিতীয় ও বর্ধিত এই সংস্করণ প্রকাশ করতে পেরে আমরা আনন্দিত।
হাসানআল আব্দুল্লাহ নতুন ধারার সনেটের প্রবর্তক, নাম: স্বতন্ত্র সনেট। মানুষ ও মহাবিশ্বের চলমানতা নিয়ে তিনি লিখেছেন মহাকাব্য, নক্ষত্র ও মানুষের প্রচ্ছদ (অনন্যা, ২০০৭)। ২০১৪-এর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর নির্বাচিত কবিতার দ্বিতীয় সংস্করণ। ১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমি থেকে বেরিয়েছে কবিতার ছন্দ, ২০১১ সালে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করেছে মাওলা ব্রাদার্স। তাঁর দ্বিভাষিক গ্রন্থ ব্রেথ অব বেঙ্গল, ও আন্ডার দ্যা থিন লেয়ারস অব লাইট প্রকাশ করেছে নিউইয়র্কের ক্রস-কালচারাল কমিউনিকেশন্স। মূলত কবি, কিন্তু সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় প্রকাশিত তাঁর গ্রন্থ সংখ্যা ৩৫। হাসানআল আব্দুল্লাহ ২০১৬ সালে চীন সরকারের আমন্ত্রণে সে দেশে অনুষ্ঠিত।আন্তর্জাতিক সিল্ক কেউ কবিতা উৎসবে যোগ দেন এবং একই বছর বিশ্ব কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্যে তিনি ইয়োরোপীয় কবিতা পুরস্কার 'হোমার মেডেল'-এ ভূষিত হন। স্বতন্ত্র সনেটের জন্যে ২০১০ সালে তিনি পান লেবুভাই ফাউন্ডেশন পুরস্কার। ২০০৭ সালে তিনি নিউইয়র্কের অন্যতম প্রধান শহর কুইন্সের পোয়েট লরিয়েট ফাইনালিস্টের সম্মান পান। ইংরেজী, ফরাসী, স্প্যানিশ, কোরিয়ান, চাইনিজ, পোলিশ ও ভিয়েৎনামী ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর কবিতা; স্থান পেয়েছে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক অ্যান্থোলজিতে। আমন্ত্রিত কবি হিসেবে কবিতা পড়েছেন মার্কিন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি আন্তর্জাতিক দ্বিভাষিক কবিতা পত্রিকা শব্দগুচ্ছ সম্পাদক এবং ১৯৯৮ সাল থেকে নিউইয়র্ক সিটির হাইস্কুলে গণিত শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।