“বড়মামার কীর্তি" বইটির প্রথম দিকের কিছু কথাঃ এক বড়মামা খেতে খেতে বললেন, আমি একটা গাধা। মেজমামার বাঁ হাতে একটা বই ডান হাতে ঝােলে ডােবান রুটির টুকরাে। এইটাই তাঁর অভ্যাস। সামান্য সময়ও নষ্ট করা চলবে না। অগাধ জ্ঞান সমুদ্র, আয়ু অল্প, বহু বিঘ্ন। সব সময় পড়ে যাও। সকালের কাগজ বাথরুমে বসে বসেই পড়েন। এখন যে বইটা খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে পড়ছেন, সেটা কাক সম্বন্ধে। কাকের স্বভাব, কাকের সমাজ, কাকের নিয়মনিষ্ঠা। পড়তে পড়তেই বললেন। কি করে বুঝলে? তােমার কান দুটো অবশ্য একটু বড়ই ঝােলা ঝােলা, সাধারণ মানুষের কান অত বড় হয় না। প্রকৃতির ব্যাপার! বােঝা শক্ত। কে যে কি ভাবে জন্মায়। চীনে মেয়েদের শিং বেরােচ্ছে। কলকাতায় ছেলেদের ন্যাজ বেরােচ্ছে। রুটির টুকরােটা মুখে ঢােকালেন। কোলের ওপর এক ফেঁটা ঝােল পড়ল। আগেও দু এক ফেঁটা পড়েছে। দৃকপাত নেই। জ্ঞান তপস্বী। | বড়মামা বললেন। “ইস্কুলে অনেকবার আমাকে গাধা প্রমাণ করার চেষ্টা হয়েছিল। মানতে রাজী হইনি। তখন বােকা ছিলুম, গাধা ছিলুম না। এখন বােকাগাধা। ওসব কানটান নয়, এ আমার স্বীকারােক্তি। আত্ম সমীক্ষার ফল। মেজমামা বই থেকে চোখ না তুলেই বললেন, “আমি দর্শনের ছাত্র, তর্কশাস্ত্র পড়েছি, অত সহজে মানতে পারব না। তুমি প্রমাণ কর। ডেকে দেখাও। গাধা চেনা যায় ডাক দেখে। ‘আমি চিনেছি গরু দেখে। গরু দেখে গাধা চেনা। অবশ্য দুটো জন্তুরই চারটে পা। চতুষ্পদ। তা হলেও মুখে মেলে না স্বভাবেও মেলে না। তােমার সিদ্ধান্ত ধােপে টিকল না। ধােপে টিকলে তুমি এতক্ষণে এই খাবার টেবিলে না থেকে বােপর আস্তাবলে বাঁধা থাকতে। খাচ্ছ খেয়ে যাও। তর্কে এসাে না হেরে যাবে।
সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি লেখক। তিনি ১৯৩৬ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহন করেন। মেদিনীপুর জেলা স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা এবং হুগলী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাগ্রহন করেন । তিনি অনেক উপন্যাস,ছোটগল্প ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন । তাঁর সবথেকে বিখ্যাত উপন্যাস লোটাকম্বল যা দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর রচনায় হাস্যরসের সাথে তীব্র শ্লেষ ও ব্যঙ্গ মেশানো থাকে ।ছোটদের জন্য তাঁর লেখাগুলিও খুবই জনপ্রিয় । তাঁর সৃষ্ট ছোটদের চরিত্রের মধ্যে বড়মামা ও ছোটমামা প্রধান ।