"পদক্ষেপ" বইটির কিছু অংশ: আপনি একজন বড় স্কলার, তাই না? এসব কথা থাক। এক গাদা ডিগ্রি কোনও কাজে লাগে না। কিন্তু এ ব্যাপারটাকে আমি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে দেখছি। কেন দেখছেন? ডিগ্রি দিয়ে কিছু হয় না।
আপনি মাধ্যমিকে প্রথম কুড়িজনের মধ্যে ছিলেন। সাধারণত এই পর্যায়ের রেজাল্ট যারা করে তারা সায়েন্স নিয়ে পড়ে এবং ডাক্তারি বা প্রযুক্তির লাইনে যায়, আপনি তা যাননি। আপনি আর্টস পড়েছেন? কেন বলুন তো?
আমার কলকব্জার ব্যাপারও ভাল লাগত না, ডাক্তারিতেও আগ্রহ ছিল না। ইতিহাসে আমার খুব ইন্টারেস্ট ছিল বরাবরই।
ইতিহাসে আমি সবসময়ই ভাল নম্বর পেতাম। ভাল কথা সবাই ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হোক এটা কাম্যও নয়। বিশেষ করে এখন ইঞ্জিনিয়ারদের বাজার পড়তির দিকে। গত কয়েক দশকে নানা ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বহু ছাত্র পাশ করে বেরানোর ফলে চাকরিতে টান পড়েছে। বিদেশেও তাদের ছাঁটাইয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে। ডাক্তারদের অবস্থা হয়তো একটু বেটার। কিন্তু নাম না করলে ডাক্তারদের পশার নেই।
আপনি প্রফেশনের কথা ভাবছেন তো আমি যখন লেখাপড়া করতাম তখন পেশা নিয়ে কিছু ভাবিনি। পড়াশুনো করতাম নেশার মতো তবে আমি জানতাম ইতিহাস পড়ে খুব মোটা মাইনের চাকরি পাওয়ার আশা নেই, বড়জোর একটা অধ্যাপনা। শেষ পর্যন্ত আপনি তাই পেয়েছেন, এতে কি আপনি খুশি ? হ্যা, অখুশি হওয়ার কী আছে বলুন। আমি তো স্বেচ্ছায় আমার বিষয় নির্বাচন করেছি।
পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ১৯৩৫ সালের ২রা নভেম্বর বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের টালমাটাল সময়ে পরিবারসমেত কলকাতা পাড়ি জমান। বাবার চাকরির সুবাদে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় শৈশব কেটেছে তার। কোচবিহার বোর্ডিং স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন তিনি। মাধ্যমিক পাস করেন কোচবিহার ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে। পরে কলকাতা কলেজ থেকে বিএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। শীর্ষেন্দু তার পেশাজীবন শুরু করেন শিক্ষকতার মাধ্যমে। দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় সাংবাদিকতাও করেছেন কিছুদিন। বর্তমানে সাহিত্য পত্রিকা দেশ-এর সহকারী সম্পাদক পদে নিয়োজিত আছেন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ছোটবেলা থেকেই ভীষণ বইপড়ুয়া ছিলেন। হাতের কাছে যা পেতেন তা-ই পড়তেন। খুব ছোটবেলাতেই তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মানিক বন্দোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, তারাশংকর বন্দোপাধ্যায় এর মতো লেখকদের রচনাবলী পড়ে শেষ করেছেন। এই পড়ার অভ্যাসই তার লেখক সত্ত্বাকে জাগিয়ে তোলে। ১৯৫৯ সালে দেশ পত্রিকায় তার প্রথম গল্প ‘জলতরঙ্গ’ প্রকাশিত হয়। দীর্ঘ ৭ বছর পর দেশ পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘ঘুণপোকা’। এরপর থেকেই নিয়মিত লিখতে থাকেন তিনি। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর বই এর সংখ্যা দু’শতাধিক। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস পার্থিব, দূরবীন, মানবজমিন, গয়নার বাক্স, যাও পাখি, পারাপার ইত্যাদি। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর রহস্য সমগ্র রহস্যপ্রেমীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রায় ৪০ এর অধিক রহস্য গল্প প্রকাশিত হয়েছে ‘অদ্ভুতুরে সিরিজ’ নামকরণে। মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি, ভুতুড়ে ঘড়ি, হেতমগড়ের গুপ্তধন, নন্দীবাড়ির শাঁখ, ছায়াময় ইত্যাদি এই সিরিজের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও তিনি বেশ কিছু ছোটগল্প রচনা করেছেন। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর বই সমূহ দুই বাংলায় পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে সমানতালে। এছাড়াও শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এর বই সমগ্র অবলম্বনে বিভিন্ন সময় চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তার উপন্যাস ‘যাও পাখি’ এবং ‘মানবজমিন’ নিয়ে বাংলাদেশেও ধারাবাহিক নাটক নির্মিত হয়েছে। তার সৃষ্ট চরিত্র শাবর দাশগুপ্ত এবং ধ্রুব পাঠক হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। সাহিত্যে অবদানের জন্য অনেক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা উপন্যাস ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’র জন্য ১৯৮৫ সালে ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কার’ পান। ১৯৭৩ এবং ১৯৯০ সালে পেয়েছেন ‘আনন্দ পুরস্কার'। ১৯৮৮ সালে ‘মানবজমিন’ উপন্যাসের জন্য অর্জন করেন ‘সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার’। এছাড়াও, ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রদত্ত সম্মান ‘বঙ্গবিভূষণ’ লাভ করেন তিনি।