কেউ জন্মগতভাবে নারী নয়, সে নারী হয়ে ওঠে। সমাজে মনুষ্যকুলের স্ত্রীলোক যে অবয়বে দেখা দেয় তা কোন জীববিজ্ঞান সংক্রান্ত, মনস্তাত্ত্বিক বা আর্থনীতিক পরিমাণ দ্বারা নির্দ্ধারিত নয়। সামগ্রিকভাবে সভ্যতা এই জীবটি সৃষ্টি করেছে, পুরুষ ও নপুংসকের মধ্যবর্তী একটা অবস্থা যাকে স্ত্রীজাতিসুলভ বলে বর্ণনা করা হয়। কেবলমাত্র অপর কারোর হস্তক্ষেপ, কোন ব্যক্তিকে ‘অন্য' বলে প্রতিষ্ঠা করতে পারে। শিশু যতক্ষণ নিজের মধ্যে এবং নিজের জন্য বাঁচে, সে কদাচিৎ নিজেকে যৌনগতভাবে আলাদা ভাবতে সক্ষম হবে। ছোট ছেলে ও মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই শরীর সর্বপ্রথম হচ্ছে মানসিক বোধের সঞ্চারক, একটা মাধ্যম যা বিশ্ব-উপলব্ধি সম্ভব করে : শিশুরা চোখ দিয়ে, হাত দিয়ে বিশ্বকে বুঝতে পারে, কিন্তু যৌনাঙ্গ দিয়ে নয়। জন্ম ও স্তন্যপান-ত্যাগের লীলাগুলি উভয় লিঙ্গের শিশুদের কাছে একই রকমে প্রকাশ পায়; এদের একই রকম আগ্রহ ও সুখবোধ থাকে; প্রথম চুষে খাওয়া তাদের কাছে সবচাইতে মনোরম অনুভূতির উৎস; তারপর তারা পায়ু সংক্রান্ত পর্যায় দিয়ে যায়, যখন তারা মল-মূত্র নিঃসারণের ক্রিয়া থেকে সবচাইতে বেশি তৃপ্তিবোধ করে। তাদের জননেন্দ্রিয়ের বিকাশ অনুরূপ : তারা একই রকম কৌতূহল ও উদাসীনতা দিয়ে নিজেদের দেহকে আবিষ্কার করে : ভগাঙ্কুর ও শিশ্ন থেকে তারা একই রকম অস্পষ্ট সুখবোধ আহরণ করে। যেহেতু তাদের বোধশক্তির একটি লক্ষ্যবস্তুর প্রয়োজন হয়, তাই এটা মায়ের দিকে ফেরে : নারীদেহের কোমল, মসৃণ, টানটান মাংসপেশীই যৌনকামনাগুলি জাগায় এবং এই কামনাগুলি আঁকড়ে থাকে; ছোট মেয়ে, ছোট ছেলের মতই, ভয়ঙ্করভাবে মাকে চুম্বন করে, নাড়াচাড়া করে এবং আদর করে। নতুন কোন বাচ্চার জন্ম হলে, তারা তার প্রতি একই রকম ঈর্ষা অনুভব করে এবং তারা এটা একই ব্যবহারিক ধরণ দিয়ে প্রকাশ করে : যেমন, রাগ, অভিমান, মূত্র-সংক্রান্ত গোলমাল; এবং
সিমন লুসি এর্নেস্তিন মারি বেরত্রঁ দ্য বোভোয়ার (ফরাসি: Simone Lucie Ernestine Marie Bertrand de Beauvoir; ৯ই জানুয়ারি ১৯০৮ – ১৪ই এপ্রিল ১৯৮৬) যিনি সিমন দ্য বোভোয়ার নামে বেশি পরিচিত, ছিলেন একজন ফরাসি লেখিকা, বুদ্ধিজীবী, অস্তিত্ববাদী দার্শনিক, রাজনৈতিক-কর্মী, নারীবাদী ও সমাজতত্ত্ববিদ। যদিও তিনি নিজেকে দার্শনিক মনে করতেন না, তার নারীবাদী অস্তিত্ববাদ ও নারীবাদী তত্ত্বতে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ছিল। তিনি দর্শন, রাজনীতি ও সামাজিক বিষয়াবলির উপর রচনা, গ্রন্থ ও উপন্যাস এবং জীবনী ও আত্মজীবনী রচনা করেন। বর্তমানে তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত তার অধিবিদ্যামূলক উপন্যাস শী কেইম টু স্টেই এবং দ্য ম্যান্ডারিন্স, এবং ১৯৪৯ সালে লেখা তার প্রবন্ধগ্রন্থ ল্য দোজিয়েম সেক্স-এর জন্য। শেষোক্ত গ্রন্থটিতে নারীর উপর নিপীড়নের বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং এটিকে নারীবাদের একটি অন্যতম ভিত্তিগ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।