"মাই জার্নি" বইটির শেষের ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ এই বইয়ে একজন অন্যতম চিন্তাবিদ এবং সফল রাষ্ট্রনায়কের অনুপ্রেরণামূলক সব গল্পের বর্ণনা আছে। স্বয়ং এ. পি. জে আবদুল কালাম এই বইয়ে তাঁর জীবনের অসাধারণ বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি একটি ছােট শহর রামেশ্বরামে বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে, দেশের এগারােতম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার এই দীর্ঘযাত্রায় অবিস্মরণীয় সংকল্প এবং উদ্যমের পরিচয় দিয়েছেন। এই বইয়ে ড. কালাম তাঁর জীবনের স্মরণীয় সব মুহূর্তগুলাের শৈল্পিক বর্ণনা দিয়েছেন। প্রতিটি ছােট ছােট ঘটনা তাকে কিভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে তারই প্রকাশ পেয়েছে এখানে। হৃদয়ের উষ্ণতা এবং মমতা মিশিয়ে তিনি ওই সকল মহৎ ব্যক্তিদের কথা বলেছেন-যারা তার ওপর প্রভাব ফেলতে পেরেছেন। তাঁদের কাছ থেকে তিনি যে সকল শিক্ষা লাভ করেছেন, তাও তিনি তুলে ধরেছেন। তার কাছের মানুষগুলাের কথাও তিনি। বলেছেন। তাঁর বাবা, যাঁর ছিল সৃষ্টিকর্তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস, তাঁর মা, যার অন্তরে ছিল অপার মমতা, তাঁদের বিবরণ দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি তার অতুলনীয় ভালােবাসার সংমিশ্রণে। তিনি তাঁর শিক্ষকদের বর্ণনাও দিয়েছেন। যে শিক্ষকেরা তাঁর ভাবনার জগত গড়ে দেন। তিনি তার শৈশব-জীবনের এক হৃদয়বিদারক বর্ণনা দিয়েছেন। কীভাবে সেই আট বছর বয়স থেকে বঙ্গোপসাগরের তীরে বেড়ে ওঠা এক শিশু জীবন-যুদ্ধের বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্যদিয়ে সামনে এগিয়ে যান এবং বিজ্ঞান-জগতের এক প্রবাদ-পুরুষে পরিণত হন এবং ভারতের রাষ্ট্রপতির আসনে আরােহন করেন। ‘মাই জার্নি' বইটি এই প্রবাদ-পুরুষের স্মৃতিবিজড়িত, সৎ এবং সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কিছু গল্পের সমন্বয়-যা অগণিত মানুষের পথের পাথেয় হয়ে আছে।
আবুল পাকির জয়নুল-আবেদিন আব্দুল কালাম (১৫ অক্টোবর ১৯৩১ - ২৭ জুলাই ২০১৫) ছিলেন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একাদশ রাষ্ট্রপতি (২০০২২০০৭)। কালাম তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন একজন বিজ্ঞানী হিসেবে। পরে তিনি ঘটনাচক্রে রাজনীতিবিদে পরিণত হন। কালামের জন্ম অধুনা ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রামেশ্বরমে। তিনি পদার্থবিদ্যা ও বিমান প্রযুক্তিবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। এরপর চল্লিশ বছর তিনি প্রধানত রক্ষা অনুসন্ধান ও বিকাশ সংগঠন (ডিআরডিও) ও ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় (ইসরো) বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান প্রশাসক হিসেবে কাজ করেন। ভারতের অসামরিক মহাকাশ কর্মসূচি ও সামরিক সুসংহত নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে তিনি অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত ছিলেন। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও মহাকাশযানবাহী রকেট উন্নয়নের কাজে তাঁর অবদানের জন্য তাঁকে ‘ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র মানব’ বা ‘মিশাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া’ বলা হয়। ১৯৯৮ সালেপোখরান-দুই পরমাণু বোমা পরীক্ষায় তিনি প্রধান সাংগঠনিক, প্রযুক্তিগত ও রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেন। এটি ছিল ১৯৭৪ সালে স্মাইলিং বুদ্ধ নামে পরিচিত প্রথম পরমাণু বোমা পরীক্ষার পর দ্বিতীয় পরমাণু বোমা পরীক্ষা।২০০২ সালে কালাম তৎকালীন শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টি ও বিরোধী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সমর্থনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। পাঁচ বছর এই পদে আসীন থাকার পর তিনি শিক্ষাবিদ, লেখক ও জনসেবকের সাধারণ জীবন বেছে নেন। ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছিলেন কালাম।