বই পরিচিতি: পৃথিবীজুড়ে নেমে এসেছে নীরবতা! রাস্তাঘাটে, অফিস-আদালতে, মাঠে-ময়দানে, শপিংমলে বা সিনেমাহলে কোথাও কোনো মানুষ নেই। যাদের ভাগ্য ভালো, তারা মৃত্যুরোগে আক্রান্ত না হয়েই বাসা পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছে। আর যাদের ভাগ্য খারাপ, তারা ভয়ংকর অসুখটির খপ্পরে পড়েছে এবং বমি করতে করতে মারা যাচ্ছে। কেউ পথেই মারা যাচ্ছে; আবার কেউকেউ বাসায় যাওয়ার পর আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারটি বুঝতে পারছে। তাদের মৃত্যু ঘটছে বাসাতে; প্রিয় মানুষগুলোর চোখের সামনে। বিভীষণ মৃত্যুফাঁদে পৃথিবীবাসী! এই মহাবিপদে পড়ে পৃথিবী কি মানুষহীন ধুধু গ্রহে পরিণত হতে যাচ্ছে; নাকি এ থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে পাবে মানুষ-সেটিই এই বইতে ফুটে উঠেছে আসিফ মেহ্দীর চমৎকার লেখনীর মাধ্যমে।
ভূমিকা (লেখকের কথা): আমি কখনো মিস করিনি। এই গুণটি আমার মধ্যে ছিল না। কিন্তু আজ ঘোরলাগা সন্ধ্যায় আমার কিছু একটা হয়েছে! আমি মিস করতে শুরু করেছি। এক একটি সেকেন্ড গড়াচ্ছে আর আমার মিস করার পরিমাণ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে। ছোট্ট এই জীবনে মিস করার মতো এতশত কিছু আমার আছে, তা আমি কল্পনাও করিনি। আমি মিস করছি আমার শৈশব-কৈশোর-তারুণ্যকে, আমার বাবা-মা-আপনজনদের, আমার একান্ত মুহূর্তগুলোকে, সর্বোপরি ভয়াবহভাবে মিস করছি আমার জন্মভূমি বাংলামাকে। মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর আমি পাড়ি জমাতে যাচ্ছি বিদেশে। ঘোরলাগা এমনই এক সন্ধ্যায় লিখছি নতুন সায়েন্স ফিকশন উপন্যাসের ভূমিকা। এই বইয়ের মাধ্যমে আমি পরিচয় করিয়ে দিতে চাই ‘মহাবিজ্ঞানী সাফি’র সঙ্গে। মহাবিজ্ঞানীর কাহিনি পড়ে পাঠকবন্ধুদের মনোজগতে ঘোরলাগা তৈরি হলে মনে করব আমার শ্রম অচেনা কৃষ্ণগহ্বরে হারিয়ে যায়নি।
সাহিত্যের প্রতি আসিফ মেহ্দীর ঝোঁক ছাত্রজীবন থেকেই। দেশসেরা দুই ফান ম্যাগাজিন উন্মাদ ও `রস+আলো`তে লেখার সুবাদে আসিফ মেহ্দী পেয়েছেন তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা। ব্যঙ্গ আর হাস্যরসের সঙ্গে গভীর জীবনবোধের প্রতিফলন রয়েছে তাঁর কাহিনিগুলোতে। ৪র্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের বেগ ও মানবিক আবেগের সমন্বয়ে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নানা উপকরণ আছে তাঁর লেখা কল্পবিজ্ঞান ও বিজ্ঞান বিষয়ক বইগুলোতে। বেস্ট সেলারের তালিকায় রয়েছে মায়া, বধির নিরবধি, অপ্সরা, তরু-নৃ, অদ্রির অভিযান, আড়াল। এখন তিনি লিখছেন কিশোর আলো, বিজ্ঞানচিন্তা ও `বিজ্ঞান আনন্দ`তে। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ছত্রিশ। অর্জন করেছেন ঢাকা ব্যাংক-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার, আর্টলিট সেরা বই পুরস্কার, ডিজি অ্যাওয়ার্ড, শ্রেষ্ঠ উপস্থাপক অ্যাওয়ার্ড, বিমানবাহিনী প্রধানের শ্রেষ্ঠ মেধা ট্রফি, অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্সসহ নানাবিধ পদক ও সম্মাননা। তিনি বর্তমানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণারত। এসএসসি ও এইচএসসিতে বোর্ড-স্ট্যান্ড এবং গ্রাজুয়েশন করেছেন বুয়েটে। যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পন্ন করেছেন এমএসসি। আসিফ মেহ্দী বাংলাদেশ বেতারের উপ-স্টেশন প্রকৌশলী। তাঁর সহধর্মিণী মৌবীণা জ্যাকলিন বারি পেশায় ডাক্তার।