রঘু এখন বসে আছে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের দেয়াল ঘেঁষে। গুলশান এলাকার নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে এই স্কুলের কয়েকশ শিক্ষার্থীকে জিম্মি করেছে জঙ্গীরা। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জঙ্গী হামলার ঘটনা এটি। প্রিয়ন্তী এই স্কুলে পড়ে। জিম্মি হয়ে আছে জঙ্গীদের হাতে। বিশেষ কৌশলে ভেতরে ঢুকে মেয়েগুলােকে নিয়ে কোনরকমে জানালা ঘেঁষে বসতে পারলাে রঘু। প্রিয়ন্তীকে চিনে নিতে কোন অসুবিধা হয়নি তার। এর মধ্যে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হলাে। গােলাগুলি আর গ্রেনেড চার্জ করার শব্দে কেঁপে উঠলাে পুরাে এলাকা। ভয় পেয়ে শক্ত করে রঘুর বাহু আঁকড়ে ধরলাে প্রিয়ন্তী। রঘু কেঁপে উঠলাে মূহুর্তের জন্য। এ যে প্রজাপতির মেয়ে। রঘুর প্রজাপতির নাড়ী ছেড়া ধন। প্রজাপতির রক্ত ঘামের স্পর্শ মিশে আছে প্রিয়ন্তীর শরীরে। যার জন্য বিশ্বসংসার তুচ্ছ করে নিজের ভালােবাসার ভালােবাসাকে বাঁচাতে জীবন বাজি রেখে এই মৃত্যুপুরীতে ঢুকেছে প্রেমিক রঘু। সব ছাপিয়ে একজন পিতা হয়েই রঘু সিদ্ধান্ত নিলাে প্রিয়ন্তীকে বাঁচাতে হবে নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও। কিন্তু.....” এভাবেই নারী পুরুষের শাশ্বত আবেগ, ভালােবাসা, প্রেম-কামের মােহ-নির্মোহ, পার্থিব পাওয়া আর না পাওয়ার মানবিক মনস্তত্ত্বকে বর্ণনা করেছেন লেখক সাবলিল বর্ণনায়। শেষ পর্যন্ত রঘু কি পেরেছিলাে তার ভালােবাসার প্রজাপতির হাতে তার সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে? রঘুর ভালােবাসা কি সত্যিই শক্তি আর সাহসের জোর হয়ে জয় করেছিলাে প্রজাপতির ভালােবাসাকে?
গোপালগঞ্জের মুনিরকান্দী গ্রামের কাজী পরিবারে জন্ম নেয়া জামশেদ নাজিম কেবল একটি নাম নয়, এক অনুসন্ধানপ্রবণ আত্মার প্রতিচ্ছবি। ২০০৫ সালে "দৈনিক আমাদের সময়" পত্রিকায় বিনোদন প্রতিবেদক হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু, কিন্তু সময়ের স্রোত তাঁকে নিয়ে যায় আরও গভীরে—রাজনীতি, অপরাধ, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। ছয় বছরের টিভি রিপোর্টিংয়ের অভিজ্ঞতা তাঁকে মানুষের জীবন ও বাস্তবতার নিকটতর করেছে। আর এই অন্তর্দৃষ্টি তাঁকে এনে দেয় সাগর-রুনি স্মৃতি পুরস্কার—সত্যের প্রতি তাঁর নির্ভীক লেখনীর এক গৌরবময় স্বীকৃতি। শব্দের পথিক, কলমের সৈনিক, শব্দের জাদুকর, অনুভূতির কারিগর—জামশেদ নাজিম। তাঁর পথচলা শুরু হয়েছিল সাংবাদিকতার আঁকাবাঁকা পথে, যেখানে সত্যের সন্ধান ছিল তাঁর কলমের একমাত্র অঙ্গীকার। কিন্তু হৃদয়ের ভেতর আরেকটি ভুবন, আরেকটি দিগন্ত ডেকে যাচ্ছিল—সাহিত্যের আকাশ। কিন্তু তিনি কি কেবল কথাসাহিত্যিক? না, তিনি একজন কবিও, যাঁর শব্দেরা জোছনার মতো কোমল, আবার গোধূলির মেঘের মতো বেদনাহত। "জোছনার কফিন"—যেখানে শব্দেরা আলো-অন্ধকারের খেলা করে, অনুভূতিগুলো ছন্দের সুরে মিশে যায়। "নিষিদ্ধ নাগরিক" এবং "মৃত্যু কখনো কখনো জরুরি হয়" বই দুটো পাঠকের কাছে থ্রিলার লেখক হিসেবে জামশেদ নাজিমকে জনপ্রিয় করে তোলে।