নূরুননবী শান্ত
গ্রন্থ: খিদমতুল মউত (দৈনিক দেশ রূপান্তর কর্তৃক ধ্রুপদি সাহিত্য মনোনীত ২০২৫)
নূরুননবী শান্ত ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভিককালে বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কুকিকালিদাশ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। যুদ্ধকালীন সময়ে তাঁর মা শামসুন্নাহার ও নানী রাজিয়া খাতুন নবজাতক শিশুকে অধিকাংশ সময় বাঙ্কারে লুকিয়ে রাখতেন। তাঁর পিতা আজিজুর রহমান। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে কুকিকালিদাশ গ্রাম ছাড়াও রংপুরের পীরগাছা উপজেলার আমডারা (পশ্চিমদেবু) গ্রামে এবং ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে। রাণীশংকৈল পাইলট হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক, কারমাইকেল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
নূরুননবী শান্ত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কুকিকালিদাশ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। যুদ্ধকালীন সময় তাঁর মা শামসুন্নাহার ও নানী রাজিয়া খাতুন নবজাতক শান্তকে অধিকাংশ সময় বাঙ্কারে লুকিয়ে রাখতেন। পিতা আজিজুর রহমান। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে কুকিকালিদাশ ছাড়াও রংপুরের পীরগাছার আমডারা (পশ্চিমদেবু) গ্রামে এবং ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে।
রাণীশংকৈল পাইলট হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক, কারমাইকেল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছাত্রজীবনে তিনি রাণীশংকৈলের ‘যুবসংঘ’, রংপুরের ‘অভিযাত্রিক’ ও ‘শব্দকণ্ঠ’-এর সক্রিয় সদস্য ছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের প্রথম আবৃত্তি সংগঠন ‘স্বনন’-এর আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরে রংপুরেও স্বননের কার্যক্রম বিস্তৃত করেন।
১৯৯৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমিরুল ইসলাম সম্পাদিত শ্বাশ্বতিক পত্রিকায় তাঁর প্রথম গল্প “সুখলোকে যাত্রা” প্রকাশিত হয়, যা কবি ও কথাশিল্পী আবুবকর সিদ্দিকের বিশেষ প্রশংসা অর্জন করে।
তাঁর প্রকাশিত গল্পগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে−
* গ্রামে প্রচলিত গল্প (মাওলা ব্রাদার্স)
* রাস্তা (মাওলা ব্রাদার্স)
* মেঘের ওপারে আকাশ (ইছামতি)
* প্রিয় দুঃস্বপ্ন (প্রিয়মুখ)
* মড়ার মাথা (আদর্শ)
* খিদমতুল মউত (আইডিয়া প্রকাশন)
‘খিদমতুল মউত’ গ্রন্থটি অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৫-এ দৈনিক দেশ রূপান্তর কর্তৃক “ছোটগল্পে ধ্রুপদি সাহিত্য” মনোনয়ন লাভ করে। আইডিয়া প্রকাশ করেছে তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ ‘প্রান্তকথা’। তিনি অনুবাদ করেছেন কেইট ডে রচিত ‘আমি তোমাদের ডাক্তার ভাই’ (অন্যধারা), অ্যালেন ডান্ডেস-এর ‘ইন্টারপ্রেটিং ফোকলোর’, টিমথি রাইস-এর ‘এথনোমিউজিকোলজি এ ভেরি শর্ট ইন্ট্রোডাকশন’ এবং কাজী খালিদ আশরাফ-এর ‘হোয়েন গঙ্গা বিকামস পদ্মা’। ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন সাধু মনোমোহন দত্তের অর্ধশতাধিক গান।
গবেষণা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও তিনি নিবিড়ভাবে যুক্ত। তিনি বঙ্গবিদ্যা বিষয়ক ‘ভাবনগর আন্তর্জাতিক জার্নাল’-এর সহযোগী সম্পাদক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সুরক্ষা, চর্চা ও পুনর্জাগরণ প্রতিষ্ঠান “ভাবনগর ফাউন্ডেশন”-এর স্বেচ্ছাসেবী নির্বাহী পরিচালক। নদীসংরক্ষণ সংগঠন রিভারাইন পিপল-এর ট্রাস্টি এবং ত্রৈমাসিক “নদীচিন্তা”-এর নির্বাহী সম্পাদক।
একজন উন্নয়নকর্মী হিসেবে তিনি এক ডজনের বেশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি আরডিআরএস বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট ও পার্টনারশিপ বিভাগের টিম লিডার। তবে তাঁর পেশাগত জীবন শুরু হয়েছিল রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে।
নূরুননবী শান্ত বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিকসমূহে নিয়মিত লিখলেও, গল্প প্রকাশের ক্ষেত্রে লিটল ম্যাগাজিনকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছেন। বাংলাদেশের বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিশ্লেষণে তিনি একজন স্বীকৃত গবেষক। ইউনেস্কোর পক্ষে ড. সাইমন জাকারিয়ার সংগে যৌথভাবে তিনি ‘বাউল সম্প্রদায়ের খাদ্যসংস্কৃতি ও শূন্যক্ষুধার পৃথিবী’ এবং ‘করোনা-পরবর্তী বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির বিবর্তন’ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা সম্পন্ন করেছেন, যা কোরিয়া ও জাপান থেকে প্রকাশিত ইউনেস্কোর জার্নালে স্থান পেয়েছে।
সাহসী ও সোজাসাপ্টা মতপ্রকাশ তাঁর লেখকসত্তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
তাঁর গল্পভাষা কাব্যিক সরলতায় পূর্ণ। তিনি উত্তরবঙ্গের প্রায় সব আঞ্চলিক ভাষাকে কথাসাহিত্যে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেন, যা তাঁর গল্পকে করে তোলে স্বতন্ত্র ও জীবন্ত। তাঁর গল্পের বিষয়বস্তু মূলত গ্রামীণ জীবনের বাস্তবতা, মনস্তত্ত্ব এবং নাগরিক জীবনের জটিল দ্বন্দ্ব।
বিশেষ করে ‘খিদমতুল মউত’ গ্রন্থের গল্পসমূহে মৃত্যুর অনিবার্যতা, জীবনের অনিশ্চয়তা এবং পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার অন্তর্নিহিত সংকট অনন্য গদ্যে উঠে এসেছে। মানুষের মৃত্যুচিন্তা, মানসিক বিপর্যয় ও সমাজবাস্তবতার দ্বন্দ্বকে গভীর অন্তর্দৃষ্টির সঙ্গে তিনি তুলে ধরেছেন, যা সমকালীন কথাসাহিত্যে এক অনন্য সংযোজন।
২০১৫ সালে তিনি “বগুড়া লেখক চক্র” সম্মাননা অর্জন করেন। তাঁর বই পাঠকমহলে বিশেষ আগ্রহ ও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়। পাশাপাশি সংগীত রচয়িতা এবং আবৃত্তিকার হিসেবেও তাঁর খ্যাতি রয়েছে।
নূরুননবী শান্ত’র অসামান্য গল্পগ্রন্থ ‘খিদমতুল মউত’-এর জন্য তাঁকে “ফিরেদেখা পদক ২০২৫” প্রদান করা হলো। এ সম্মাননা প্রদানে ‘ফিরেদেখা’ পরিবার গর্বিত।