"দি সিক্রেট" বইটির 'প্রাককথন' অংশ থেকে নেয়াঃ ঠিক এক বছর আগে আমার জীবন চারদিক থেকে ভেঙে পড়ে। আমার কাজ আমাকে ক্লান্ত করে ফেলে, আমার বাবা হঠাৎ মারা যান, সহকর্মীদের এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ঝড়ের মুখে পড়ে। আমি শুধু এটুকই জানি যে আমার জীবনের সেরা উপহার সেদিন চূড়ান্ত হতাশার মধ্য দিয়েই এসেছিল। ঠিক সেই সময় জীবনের রহস্যটির ঝলক আমার চোখে পড়েছিল। আমার মেয়ে হেডলী আমাকে একটা একশ বছরের পুরানাে বই দিয়েছিল। আমি অতীতে তাকিয়ে ইতিহাসের মধ্যে সেই রহস্য খুঁজতে শুরু করলাম। আমি যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে প্লেটো, শেক্সপিয়র, নিউটন, হুগাে, বিটোফেন, লিঙ্কন, এমার্সন, এডিসন, আইনস্টাইনের মতাে ইতিহাস খ্যাত মহান মানুষরা এই রহস্য জানতেন। অবিশ্বাস্য! আমার মনে প্রশ্ন জাগল, “একথা সব মানুষ কেন জানে না?” সারা জগতের সঙ্গে এই রহস্য ভাগ করে নেওয়ার একটা প্রবল ইচ্ছা আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল, খুঁজতে শুরু করলাম সেই সব জীবিত মানুষদের যারা এই রহস্য জানেন। তারা একের পর এক আসতে শুরু করলেন, আমি যেন একটি চুম্বক হয়ে উঠলাম। খুঁজতে শুরু করার পর জীবিত শিক্ষকরা একের পর এক এলেন আমার কাছে। আমি আবিষ্কার করলাম সেই সব শিক্ষকদের যারা শৃঙ্খলের মতাে একজন অন্যজনের সঙ্গে যােগ স্থাপন করালেন। আমি ভুল পথে গেলে, অন্য কিছু আমার মনােযােগ আকর্ষণ করলে, সেই পরিবর্তিত পথ থেকেই পরবর্তী মহান শিক্ষক উপস্থিত হয়েছেন। ইন্টারনেট সার্চ করার সময় ‘ঘটনাচক্র’ ভুল লিঙ্কে হাত পড়লেও আমি পৌছে গেছি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে। কয়েক সপ্তাহ পর, আমি শতাব্দীর পর শতাব্দী ঘুরে খুঁজে পেয়েছি সেই রহস্যের পথ এবং আবিষ্কার করেছি তাঁদের যারা বর্তমানকালে সেই রহস্যের চর্চা করেছেন। সেই রহস্যকে একটি চলচ্চিত্রে রূপায়িত করার স্বপ্ন আমার মনে স্থির হয়ে বসেছিল। আমার চলচ্চিত্র এবং দূরদর্শনের প্রযােজক-দল পরবর্তী দুই মাসে সেই রহস্য শিখেছিলেন। ধরে নিতে হবে দলের প্রতিটি সদস্যই শিখেছিলেন কারণ এই জ্ঞান ছাড়া আমরা যা করতে চাইছিলাম তা করা সম্ভব হতাে না। এই ফিল্ম তৈরির ক্ষেত্রে পথ দেখানাের মতাে কোনাে শিক্ষকই আমাদের সঙ্গে সেদিন ছিলেন না। কিন্তু আমরা রহস্যকে জেনেছি, তাই শুধুমাত্র বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে উড়ে গেলাম অস্ট্রেলিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে, বেশিরভাগ শিক্ষকরা যেখানে রয়েছেন। সাত সপ্তাহের প্রচেষ্টায় আমাদের দল সারা যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চান্ন জন মহান শিক্ষকের কথা ১২০ ঘণ্টারও বেশি দীর্ঘ একটি ফিল্মে বন্দি করলেন। দি সিক্রেট নামের এই চলচ্চিত্র সৃজন করতে প্রতি পদক্ষেপে, প্রতি শ্বাসে সাহায্য নিয়েছি সেই রহস্যেরই। আক্ষরিক অর্থেই আমরা চুম্বকিত করেছিলাম প্রতিটি বস্তু ও প্রতিটি মানুষকে, আট মাস পর দি সিক্রেট মুক্তি পেল। ফিল্মটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তেই বিস্ময়কর সব গল্পের বন্যা বইল। মানুষ লিখল ক্রনিক ব্যথা, অবসাদ ও রােগ উপশমের কথা, দুর্ঘটনার পর এই প্রথম হাঁটতে পারার কথা, এমনকি মৃত্যুশয্যা থেকে উঠে দাঁড়ানাের কথাও। রহস্যের প্রয়ােগ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও অপ্রত্যাশিত চেক লাভের হাজার হাজার বিবরণ জানিয়ে মেইল পাঠানাে হলাে আমাদের। বহু মানুষ প্রিয় ঘরবাড়ি, গাড়ি, জীবনসঙ্গী, চাকরি, পদোন্নতি, নানা রকম ব্যবসায় ইত্যাদি বাস্তবে দেখতে পাওয়ার তাড়নায় দি সিক্রেট-এর প্রয়ােগ করে। কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের স্বপ্ন রূপ গ্রহণ করতে শুরু করে। এর মধ্যে সম্পর্ক-সংকটের উষ্ণ-সম্পর্কে পরিবর্তনের গল্প ছিল, ছিল সন্তানদের ঠিক পথে ফিরিয়ে আনার গল্পও। বেশ কিছু বিস্ময়কর গল্প আমরা শুনেছিলাম বাচ্চাদের কাছ থেকে যারা রহস্য প্রয়ােগ করে ভালাে গ্রেড, ভালাে বন্ধু থেকে শুরু করে যা চায় তাকেই আকর্ষণ করেছিল। দি সিক্রেট বহুজনকে অনুপ্রাণিত করেছিল তাদের অভিজ্ঞতা অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিতে ডাক্তারকে রােগীর সঙ্গে, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে, স্বাস্থ্যসমিতিগুলােকে সভ্যদের সঙ্গে, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের গির্জা ও অধ্যাত্মচর্চার কেন্দ্রগুলােকে ভক্তদের সঙ্গে। সারা পৃথিবীতে বহু গৃহে প্রিয়জন এবং পরিবারের সঙ্গে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে দি সিক্রেট-এর নামে পার্টি হয়েছে। একটা বিশেষ ধরনের পালক থেকে দশ মিলিয়ন ডলার যেকোনাে রকম বস্তু আকর্ষণের ক্ষেত্রে দি সিক্রেট-এর প্রয়ােগ করা হয়েছে। ফিল্মটি মুক্তি পাওয়ার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে এত সব ঘটেছে। দি সিক্রেট-সৃজনের সময় আমার আকাঙ্ক্ষা ছিল এবং এখনও আছে- এটি সারা পৃথিবী জুড়ে কোটি কোটি মানুষের মনে আনন্দ আনবে। দি সিক্রেট টিমের সদস্যরা প্রতিদিন সেই আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়িত হতে দেখছেন। কারণ আমরা সারা পৃথিবীর সব বয়সের, সব জাতির, সব দেশের মানুষের হাজার হাজার চিঠি পাচ্ছি দি সিক্রেট থেকে পাওয়া আনন্দের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে। এমন কোনাে বিষয় নেই যা আপনি এই জ্ঞানের সাহায্যে করতে পারেন না। আপনি যা চান দি সিক্রেট আপনাকে তাই দেবে। এই বইতে চব্বিশ জন অসাধারণ শিক্ষকের কথা বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন সময়ে তাঁদের কথা ফিল্মে ধরা হয়েছে অথচ তারা সকলেই যেন একই স্বরে কথা বলেছেন। এই বইতে দি সিক্রেট-এর শিক্ষকদের বক্তব্য উপস্থাপিত হয়েছে এবং দি সিক্রেট যখন কাজ করছে তখন যেসব বিস্ময়কর ঘটনা ঘটছে সেগুলাে তুলে ধরা হয়েছে। আমি এই বইতে সবরকম সহজ পথ, কৌশল, সংক্ষিপ্ত রাস্তা, সবই আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছি যাতে আপনি আপনার স্বপ্নের জীবনযাপন করতে পারেন। আপনি লক্ষ করবেন বইয়ের কিছু কিছু স্থানে আমি ‘আপনি’ শব্দটি বড় করে লিখেছি। কারণ আমি চাই আপনি, পাঠক, যাতে অনুভব করেন এবং বুঝতে পারেন যে এই বইটি আমি শুধু আপনাদের জন্যই লিখেছি। যখন আপনি বলছি তখন আমি ব্যক্তি ‘আপনি’র সঙ্গেই কথা বলছি। আমি চাই আপনারা যেন। এই বইয়ের পাতাগুলাের সাথে আত্মীয়তা অনুভব করতে পারেন কারণ দি সিক্রেট আপনাদের জন্যই সৃষ্ট হয়েছে। যখন এই বইয়ের পাতার মধ্য দিয়ে যাবেন এবং যখন আপনি এই রহস্য শিখবেন তখন জানতে পারবেন আপনি যা চান তা কীভাবে পাবেন, কীভাবে করবেন বা কীভাবে হবেন? আপনি জানবেন আপনি সত্যিই কে? জানতে পারবেন আপনার জন্য কী চমৎকারিত্ব অপেক্ষা করে আছে?
Rhonda Byrne is the creator behind The Secret, a documentary film that swept the world in 2006, changing millions of lives and igniting a global movement. The following year Rhonda's book of The Secret was released, which was translated into over fifty languages and remains one of the longest-running bestsellers of this century. Rhonda has written three more bestselling books since, which together form The Secret Books Series: The Power in 2009, The Magic in 2010, and Hero in 2013.