শয়তান আমাদের আদি শত্রু। চির শত্রু। মহা শত্রু। তার এ শত্রুতা মানব জাতির আদি পিতা থেকে নিয়ে সৃষ্টির শেষ মানুষটি পর্যন্ত দীর্ঘ। তার অভিনব ধোকা আর বিচিত্র কূটচাল জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে, শূন্যে মহাশূন্যে-তথা পৃথিবীর সর্বত্র সকলের জন্য বিস্তৃত। তার প্রলোভন ও প্রতারণা থেকে বাঁচতে পারেনা আলেম-জাহেল, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ- কেউই। সর্বত্র সবার জন্য সে পুঁতে রেখেছে অকল্পনীয়-অবর্ননীয় পাপের বীজ। পৃথিবীব্যাপী সে বিছিয়ে রেখেছে অজস্র মোহজাল। পেতে রেখেছে অসংখ্য কুটিল ফাঁদ। সূক্ষ্ম-স্থূল সকল প্রকার ফন্দিতে শয়তান অদ্বিতীয়। শয়তানকে কোরআন মাজিদে ইবলিশও বলা হয়েছে। তাতেই ব্রিজ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১১ বার। শয়তানের এনাম এ আলোচ্য গ্রন্থ তালবিসে ইবলিস নামকরণ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয়ার জন্য শয়তানকে সুযোগ অবকাশ দিয়েছেন বটে; কিন্তু শয়তানের প্রতারণা ও বিভ্রান্তি থেকে আত্মরক্ষার জন্য মানুষকে শয়তানি প্রতারণার যাবতীয় কুটকৌশল জানিয়ে দিয়েছেন এবং বাঁচার উপায় বলে দিয়েছেন। শয়তানি প্রতারণার কৌশল সমূহ যেমন কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, তেমনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরআন উপস্থাপনের সাথে সাথে কোরআনের ব্যাখ্যা হিসেবে নিজের বাণীতে সেগুলো জানিয়ে দিয়ে গেছেন। আলোচ্য তালবিসে ইবলিস বা শয়তানের ধোঁকা গ্রন্থটিতে সে বিষয়গুলো অত্যন্ত নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আল্লামা শাইখ ইবনু জাওজী রাহিমাহুল্লাহ।
আব্দুর রহমান বিন আলি বিন মুহাম্মদ বিন আবুল ফারাজ বিন আল-জাওযী , প্রায়শই সংক্ষেপে ইবনুল জাওযী ( আরবি : ابن الجوزي, ইবনে আল-জাওযী'; ১১১৬ - ১৬ জুন ১২০১ খ্রিস্টাব্দ) বা সুন্নি মুসলমানদের কাছে ইমাম ইবনুল জাওযী ছিলেন একজন আরব মুসলমান আইনজ্ঞ, প্রচারক, বক্তা, ধর্মবিদ্যাবিদ, ইতিহাসবিদ, বিচারক, এবং সাস্কৃতিক ভাষাবিদ । তিনি হাম্বলি মাযহাব বাগদাদে শহরে প্রচারে অক্লান্ত ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ধনী পরিবারের সন্তান ছিলেন এবং তিনি আবু বকরের বংশোদ্ভূত ছিলেন,ইবনুল জাওযীর ছেলেবেলা থেকেই পর্যাপ্ত জ্ঞান লাভ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। আর সেই যুগের সর্বাধিক খ্যাতিমান বাগদাদী আলেম ইবনে আল-জাগুনি (মৃত্যু ১১৩৩), আবু বকর আল-দিনাওয়ারী (মৃত্যু ১১১৭-৮), রায্যাক্ব আলী গিলানী (মৃত্যু ১২০৮), এবং আবু মনসুর আল-জাওয়ালিকা (মৃত্যু ১১৪৪-৫) সহ অনেক পন্ডিতদের অধীনে শিক্ষা নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল।