"মহাকাব্যে চিরন্তনী" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: পুরাকালের ক্ষুদ্র দুটি ঘটনার বিন্দুকে কেন্দ্র করে মহাকবি বাল্মীকি ও কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন। ব্যাস সৃষ্টি করেছিলেন মনােহারী দুই কাব্য। কালের গতিতে কল্পনার প্রলেপে পল্লবিত হয়ে কিংবদন্তীর হাত ধরে বিভিন্ন সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ক্রমে তারা পুষ্টিলাভ করেছে বিচিত্র বিন্যাসের মহাকাব্যিক কলেবরে। সীমাহীন ব্যাপকতায় বিভিন্ন দেশ ও ভাষাভাষিক বাধাকে অগ্রাহ্য করে ভারতীয় প্রাত্যহিক জীবনের চিন্তা-ভাবনায়, চালচলনে, কথােপকথনে তারা ওতপ্রােত হয়ে গিয়েছে। একই আধারে সভ্যতা, সংস্কৃতি, পুরাণ, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম-অর্থ-কাম-মােক্ষ, শাস্ত্র ছাপিয়ে বহু আকর্ষণীয় মানব-মানবীর সঙ্গে ঘটেছে আমাদের পরিচয়। তাদের মনন-চিন্তন, দোষগুণ, আশা-আকাঙ্ক্ষা, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার পশ্চাদপটে সময়ের পরিপ্রেক্ষিত বদলে গেলেও আজকের মানব-চরিত্র লক্ষণের সঙ্গে কিছুমাত্র প্রভেদ নেই। সারল্য ও জটিলতার সমন্বয়ে তাই তারা হয়ে উঠেছে চিরায়ত মানুষ। পরস্পরের পরিপূরক পুরুষ চরিত্ররা তাদের নিজস্বতায় নানা অসঙ্গতির সৃষ্টি করলেও মহাকাব্যীয় নারীরা চারিত্রিক বিভিন্নতায় একে অপরকে অতিক্রম করে গিয়েছেন। চমৎকারিত্ব, রহস্য ও মােহময়তায় কেউ কেউ হয়ে উঠেছেন চিরস্মরণীয় এবং বিভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপিত। কিন্তু প্রসঙ্গক্রমে, কাহিনির স্বার্থ বা ঘটনাচক্রে যারা এসেছে তাদের অধিকাংশই আমাদের অল্পচেনা, নামে চেনা অথবা না-চেনা। সকল চেনা ও না-চেনা আর নামে চেনা মহাকাব্যীয় মানবীদের নিয়েই এই গ্রন্থের উপস্থাপনা।