আহমদ ছফা সঞ্জীবনী আহমদ ছফা জাতীয় সাহিত্যের মূল হইতে আসিয়াছিলেন এবংসেখানেই ফিরিয়া গিয়াছেন। আমাদের জাতীয় সাহিত্য হইতে তাঁহাকে আলাদা করা যাইবে না। ১৯৭১ সনের অভিজ্ঞতা আমাদের জাতীয় সাহিত্যের সংজ্ঞা সামান্য বড় করিয়াছে। স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কিংবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘জাতীয় সাহিত্য’ বলিতে যাহা বুঝাইতেন আজ আমরা ঠিক তাহা বুঝি না, একটু অতিরিক্ত বুঝিয়া থাকি। ইহার নাম ১৯৭১। ১৯৭১ সনের যুদ্ধকে কেহ বলেন ‘মুক্তিযুদ্ধ’ কেহ বা ‘স্বাধীনতা যুদ্ধ’। কেহ ইহাকে ‘বিপ্লব’ বলিয়া বিড়ম্বিত করেন না। আহমদ ছফা এই যুদ্ধকে মধ্যে মধ্যে বিপ্লব বলিয়া ভ্রম করিতেন। এইটুকুই হয়তো অতিরিক্ত। বাংলার জাতীয় সাহিত্য বলিতে তাই আমরা উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম ঊর্ধ্ব অধঃ ছয় বাংলা মাত্র দেখি না। কিংবা বুঝি না শুদ্ধ বৌদ্ধ খ্রিস্টান কি হিন্দু মুসলমান পুরাণ। আমাদের জাতীয় সাহিত্য ইহাদের যোগফলের সামান্য অধিক। এই অধিকই আহমদ ছফার মধ্যে বিশেষ হইয়াছে। যে পুস্তক পাঠ করিলে ইহা বুঝিতে পারা যায় তাহার নাম আহমদ ছফা সঞ্জীবনী। জাতীয় সাহিত্য ১ সলিমুল্লাহ খানের লেখা গ্রন্থমালার মধ্যে বাংলায় ‘জাক লাকাঁ বিদ্যালয়’ ও ‘ইতিহাস কারখানা’ আর ইংরেজিতে ‘একবালনামা’। এক্ষণে তাঁহার ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক লেখা লইয়া আরেকটি গ্রন্থমালা। নাম ‘জাতীয় সাহিত্য’। সাহিত্য যেমন শুদ্ধ সাহিত্য নহে ভাষাও, তেমনি ‘জাতীয়’ মানেও নিছক বাংলা সাহিত্য নহে, স্বদেশি বিদেশি নির্বিশেষে ‘জনসাধারণের’ সাহিত্য। আরো কাদামাখা ভাষায় ‘ছোটলোকের’ সাহিত্য। জাতি বলিতে আমরা সাধারণত ছোটলোক বুঝিয়া থাকি। আমাদের কাছে জাতীয় সাহিত্য মানে তাই ছোটলোকের তথা সাধারণের সাহিত্য। আহমদ ছফার রচনা কিংবা তাঁহার স্মৃতি লইয়া সলিমুল্লাহ খান অদ্যাবধি যাহা কিছু লিখিয়াছেন তাহা দিয়া জাতীয় সাহিত্য গ্রন্থমালার প্রথম গ্রন্থ আহমদ ছফা সঞ্জীবনী। এই গ্রন্থমালার দ্বিতীয় ও তৃতীয় গ্রন্থ যথাক্রমে বাংলামদ এবং বাংলার মুসলমানি নামে বাহির হইবে বলিয়া আশা করা যায়। আহমদ ছফা সঞ্জীবনী গ্রন্থে সব মিলাইয়া একুশটি প্রবন্ধ। বিষয়বস্তু অনুসারে এই সংগ্রহের চার ভাগ। রচনার ব্যাপ্তি ৩৩ বৎসর। আহমদ ছফার দুইটি ১৯৭১-প্রবন্ধ হিসাবে ধরিলে ভাগ পাঁচ, ব্যাপ্তি ৩৯।
সলিমুল্লাহ খান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনশাস্ত্রে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ স্কুল ফর সোশাল রিসার্চ থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। অধ্যাপক খান প্রথিতযশা লেখক ও সমালোচক। তাঁর রচনার বড় অংশ সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য এবং মনোবিশ্লেষণে কেন্দ্রীভূত এবং আহমদ ছফা, কার্ল মার্কস, ফ্রানৎস ফানোঁ, জাক লাকাঁ প্রভৃতি মনীষীর কাছে ঋণী। তাঁর কীর্তির মধ্যে গণ্য: আহমদ ছফা সঞ্জীবনী, আ মরি আহমদ ছফা: বিষয় বাঙালি মুসলমানের মন, প্রার্থনা, ঠাকুরের মাৎস্যন্যায়: ভাষা-শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতা, আদমবোমা, স্বাধীনতা ব্যবসায় এবং Silence: On crimes of power। সম্পাদিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার মধ্যে: বেহাত বিপ্লব ১৯৭১, গরিবের রবীন্দ্রনাথ, আহমদ ছফার স্বদেশ, প্রাক্সিস জর্নাল, অর্থ: আহমদ ছফা রাষ্ট্রসভা পত্রমালা এবং Apostrophe: Working Papers of the Center for Advanced Theory। অনূদিত গ্রন্থের মধ্যে: উহারা বাতাসে: পেন্টি সারিকস্কির কবিতা ১৯৫৮-১৯৮০, আল্লাহর বাদশাহি: ডরোথি জুল্লের নির্বাচিত কবিতা এবং সক্রাতেসের তিন বাগড়া।