সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করার জন্যে দেশের জনগণ ছিলেন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তাদের ইচ্ছা-আকাঙ্খাও ছিল তা। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে সে ইচ্ছা-আকাঙ্খা পুরণ হয়নি। সকল বিদেশী শোষণ-আধিপত্য থেকে পরিপূর্ণ জাতীয় মুক্তি ও সেই সাথে জনগণের আর্থ-সামাজিক মুক্তি অর্জন করতঃ জনগণের নিরঙ্কুশ বা নির্ভেজাল শাসন প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে বাংলাদেশে রাতারাতি প্রতিষ্ঠিত হয় দেশী-বিদেশী লুটেরা ধনিক-বণিকদের শাসন ও শোষণ। অপরদিকে সমাজ পরিবর্তনের দীক্ষায় দীক্ষিত ও সে লক্ষে সংগঠিত বিপুল বিপ্লবী শক্তি আন্তর্জাতিক সমাজবাদী আন্দোলনে ভাঙ্গনের দরুন বহুধা বিভক্ত হয়ে পড়ে, এবং সে সুযোগে প্রতিক্রিয়াশীল উঠতি বুর্জোয়াগণ বাংলাদেশে স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধে ও তৎপরবর্তীকালে দেশ পরিচালনার নেতৃত্বদান করে। এবং রাষ্ট্রনৈতিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক স্তর বেখে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পৌছার পরিবর্তে সরাসরি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে সবকিছু করা হয় জাতীয়করণ ও পরিকল্পিতভাবে চলে 'আওয়ামীকরণ' বা শাসকদল আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দেশের ধনসম্পদ অবাধ লুণ্ঠন। অতঃপর, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ভেঙ্গে দিয়ে করা হয় একদলীয় 'বাকশাল' শাসন। সবকিছু মিলে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, লক্ষ ও চেতনা বিরোধী কর্মকাণ্ড চলতে থাকে। দেশ হয়ে পড়ে দেশী-বিদেশী লুটেরাদের শোষণ-নিপীড়নের চারণ ক্ষেত্র। এবং অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, জনগণের শাসন বা প্রকৃত গণতন্ত্রতো নয়ই তার স্থান দখল করেছে পরিবারতন্ত্র। স্বাধীন বাংলাদেশের ৩৫ বছর পর আজ দেখা যায় যে, বাংলাদেশের তথাকথিত দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) পালাক্রমে দেশের উপর দু'টি নির্দিষ্ট পরিবারের শাসন ও শোষণ কায়েম করেছে। তাদের সাথে আছে বিশ্ব সম্রাজ্যবাদী ও আঞ্চলিক আধিপত্যবাদীদের লগ্নি পুঁজির লুটেরা মালিকগণ।