আদরিব মালাশ এর রচিত বই ‘ছাত্রদর্পন’। দর্পন শব্দটি আয়নার একটি সমর্থক শব্দ। তাহলে আমরা এভাবেও বলতে পারি ছাত্রের আয়না। অর্থাৎ ছাত্রজীবনের করণীয় ও কর্তব্য কি হতে পারে তা নিয়েই মূলত এই বইটিতে আলোচনা করা হয়েছে। বইটি দুইটি পর্বে লেখা হয়েছে। ৬৪টি পৃষ্ঠার এ বইটির মধ্যে ছাত্রদের সম্পর্কে নানা পরামর্শ ও উপদেশ রয়েছে। এছাড়া লেখক নানারকম উদাহরণ টেনে তার কথার যৌক্তিকতা বুঝিয়েছেন। প্রথম পর্বে ৭ থেকে ৫১ পৃষ্ঠাব্যাপী রয়েছে একটি দীর্ঘ লেখা। এ লেখাটির শেষের দিকে নিজের সাথে নিজে কথা বলার একটি অংশে লেখক আদরিব মালাশ একটি অভিনব বিষয় উপস্থাপন করেছেন। যেমন- : আমি কে? - আমি একজন ছাত্র। : ছাত্র কাকে বলে? - যে শিক্ষা-যানের যাত্রী। : এ যানের গন্তব্য কোথায়? - নিত্য-নতুন অজানায়। : অজানাকে জেনে লাভ কী? - জানার মাঝেই জ্ঞান, জানার মাঝেই আনন্দ। এ বিষয়টি একটি আত্মকথন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সাথে নিজের যেমন কথা বলা যায় ঠিক তেমনি। এ কথপোকথনের মধ্য দিয়ে নিজের সম্পর্কে নিজের একটি ধারণা জন্ম নিবে। আসলে নিজেকে নিজে যতোটা অনুপ্রাণিত করা যায় তা হয়তো অন্যের পক্ষে করা ততোটা সহজ নয়। দ্বিতীয় পর্বে আছে বেশ কিছু শিরোনামে লেখা। এগুলো হলো- আমলনামা, উদাহরণ, কলি, ব্যাকরণ, ঋণ, শক্তি, সম্পদ, নিরাপদ সম্পদ। প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে ছাত্র জীবনের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত নানা পরীক্ষা আর নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে হয়। শিক্ষক, বন্ধু আর পরিবারের বাইরে ছাত্র জীবনে খুব একটা বাইরের মানুষের সাথে চলা হয় না। ফলে এ সময় একটি পরিচিত গণ্ডির মধ্যে থেকে নিজেকে বিকশিত করতে হয়। অনেক কথা বলা বা অনেক জানার বিষয় অজানা থেকে যায়। এসময় বই হতে খুব সহায়ক। ‘ছাত্রদর্পণ’ বইটি একজন ছাত্রের বন্ধু, শিক্ষক এর মতো ভূমিকা রাখবে বলা যায়।
আদরিব মালাশ পেশাগত জীবনে শিক্ষকতা ও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, তাঁর মনন ও কলম নিবদ্ধ রয়েছে চিন্তার প্রসার ও প্রজন্ম নির্মাণে। শিক্ষার অন্তর্জগৎ ও ছাত্রজীবনের অভিজ্ঞতাকে অবলম্বন করে তিনি রচনা করেছেন তাঁর প্রথম গ্রন্থ “ছাত্রদর্পণ”—যা ছাত্রজীবনের স্বপ্ন, সংকট ও আত্মশুদ্ধির আয়না হয়ে ওঠে পাঠকের সামনে। একাধারে শিক্ষকতালব্ধ অভিজ্ঞতা ও বাস্তবজীবনের পর্যবেক্ষণ তাঁর লেখাকে দিয়েছে বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রজ্ঞাবোধ। "ছাত্রদর্পণ"-এ শিক্ষার্থীদের মনস্তত্ত্ব, অনুশাসন, আত্মউন্নয়ন ও নৈতিক সংকটের দিকগুলিকে সংবেদনশীল ও দিকনির্দেশনামূলক ভাষায় উপস্থাপন করেছেন তিনি। আদরিব মালাশ কেবল একজন লেখক নন—তিনি একজন চিন্তাশীল পথপ্রদর্শক, যিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আত্মগঠনের সুর নির্মাণে সচেষ্ট। শিক্ষা ও চিন্তার এই সম্মিলনই তাঁর সাহিত্যকে দিয়েছে এক ব্যতিক্রমী গভীরতা ও গঠনমূলক প্রভাব।