বেলা শেষে মৃদু হেসে রোদ গেছে দূরে, পারদের মতো ঢের এলোমেলো সুরে- হেঁটে যাই যেতে চাই বহুদূর দেশে, কোনো বীর পৃথিবীর যায়নি সে শেষে! পৃথিবীর যেথা শেষ, সেথা এক মেয়ে- সাধারণ, সাদামাটা এ কবিকে পেয়ে হাত দুটো হাতে রেখে বলবে, “ও প্রিয়, এ আঁধারে হৃদয়ের দ্যুতিটুকু দিও।” থেমে যাবে পৃথিবীর কোলাহল সব, অনুভবে শুধু রবে প্রাণ-কলরব! আসিফ মেহ্দী ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলেন ২০০৮ সালে। তারপর থেকে স্ট্যাটাস হিসেবে ফেসবুকে পোস্ট করতে থাকেন ছোট-বড় ছড়া-কবিতা। প্রাত্যহিক জীবনে ঘটে যাওয়া ছোট-বড় সব ঘটনা নিয়ে স্ট্যাটাসগুলো পোস্ট করেন বলে এই ছড়া-কবিতাগুলো আসলে মানবজীবন ও জগৎসংসারের প্রতিচ্ছবি। আসিফ মেহ্দী এগুলোর নাম দিয়েছেন ‘ন্যানো কাব্য’। জীবনের নানা প্রহরে সুখ-দুঃখ আর হাসি-কান্নার মিশেলে যে ছোট ছোট অনুভূতিগুলো আমাদের কাছে ধরা দেয়, সেসব অনুভূতিই ফুটে ওঠে তাঁর লেখা ন্যানো কাব্যে। ভিন্নধর্মী কাব্যধারার সূচনাকারী এই ন্যানো কাব্যের জনককে পাঠকভক্তরা ভালোবেসে ডাকেন ‘ন্যানো কবি’। ন্যানো কবির ভাষায়, “ন্যানো মুহূর্তের আবেগের স্ফুরণই ন্যানো কাব্য। এই স্ফুরণের প্রকাশ ঘটতে পারে দুই লাইনে; আবার ঘটতে পারে বিশ লাইনে। অর্থাৎ ন্যানো কাব্য ছোট-মাঝারি-বড় বিভিন্ন আকৃতির হতে পারে; তবে ন্যানো কাব্যে যে অনুভূতি ছন্দাকারে প্রকাশ করা হয়, তা জীবনে চলার পথে হঠাৎ পাওয়া কোনো উপলব্ধি-ন্যানো মুহূর্তের উপলব্ধি।”
সাহিত্যের প্রতি আসিফ মেহ্দীর ঝোঁক ছাত্রজীবন থেকেই। দেশসেরা দুই ফান ম্যাগাজিন উন্মাদ ও `রস+আলো`তে লেখার সুবাদে আসিফ মেহ্দী পেয়েছেন তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা। ব্যঙ্গ আর হাস্যরসের সঙ্গে গভীর জীবনবোধের প্রতিফলন রয়েছে তাঁর কাহিনিগুলোতে। ৪র্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের বেগ ও মানবিক আবেগের সমন্বয়ে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নানা উপকরণ আছে তাঁর লেখা কল্পবিজ্ঞান ও বিজ্ঞান বিষয়ক বইগুলোতে। বেস্ট সেলারের তালিকায় রয়েছে মায়া, বধির নিরবধি, অপ্সরা, তরু-নৃ, অদ্রির অভিযান, আড়াল। এখন তিনি লিখছেন কিশোর আলো, বিজ্ঞানচিন্তা ও `বিজ্ঞান আনন্দ`তে। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ছত্রিশ। অর্জন করেছেন ঢাকা ব্যাংক-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার, আর্টলিট সেরা বই পুরস্কার, ডিজি অ্যাওয়ার্ড, শ্রেষ্ঠ উপস্থাপক অ্যাওয়ার্ড, বিমানবাহিনী প্রধানের শ্রেষ্ঠ মেধা ট্রফি, অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্সসহ নানাবিধ পদক ও সম্মাননা। তিনি বর্তমানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণারত। এসএসসি ও এইচএসসিতে বোর্ড-স্ট্যান্ড এবং গ্রাজুয়েশন করেছেন বুয়েটে। যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পন্ন করেছেন এমএসসি। আসিফ মেহ্দী বাংলাদেশ বেতারের উপ-স্টেশন প্রকৌশলী। তাঁর সহধর্মিণী মৌবীণা জ্যাকলিন বারি পেশায় ডাক্তার।