‘ছলনাসুন্দর’ পৃথিবীটাকে মানুষ কত সুন্দরভাবেই-না সাজায়! সেই স্বপ্নসজ্জিত পৃথিবীটা ছেড়ে তাকে চলে যেতে হয় একদিন। চলে যায় সবাই। তাতে ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো ভূমিকা নেই, প্রভাব নেই। মৃত্যুর যাত্রা মানুষের অগস্ত্যযাত্রা নয়, বরং চিরায়ত অভ্যস্ত-যাত্রা।
. সুন্দর-সুরম্য চেনা গন্তব্যের দিকে নিশ্চিত যাত্রাই মৃত্যু। অথচ কিছু মানুষ সে নামটি শুনলেই চমকে উঠে, সচকিত হয়। যখন সূর্য অস্তাচলে যায় কিংবা চাঁদ ডুবে, তখন মনে হয়, এখানেই বুঝি শেষ। কিন্তু না। এই তো সূর্য উঠছে, ফুটছে সুন্দর প্রভাত। যদি জানতাম মৃত্যু বলে কিছু নেই, তাহলে পৃথিবীটা এত সুন্দর লাগত না আমাদের।
. মৃত্যু পবিত্র একটা বিষয়, বিভিন্ন উপায়ে সংঘটিত হয়ে স্রষ্টার কাছে ফিরে যাওয়ার একটা সুন্দর পদ্ধতি। অন্যভুবনে পৌঁছানোর বিরতিতে একটা দীর্ঘ ঘুমের বিশ্রাম। আল্লাহ যেন আমাদের মৃত্যুকে এমনই করেন! সুন্দর মৃত্যু চায় সকলেই। সুন্দর মৃত্যু মানেই অনন্ত সুখের পথে অভিসার, চিরশান্তির অন্তহীন বিস্তার। মৃত্যুটা এমন না হয়ে উল্টো হলেই সর্বনাশ! আল্লাহ যেন আমাদের হেফাজত করেন!
. কবর-জগতের কথা ভাবতেই কেউ শিউরে উঠে, কেউ আবার শিহরিত হয়। তারপর সবাইকে দাঁড় হতে হবে আলো-অনাবিল কিংবা সূর্যদগ্ধ বিশাল প্রান্তরে—হাশর। বহু বিষণ্নতার পালা পেরিয়ে অপেক্ষা করতে হবে চূড়ান্ত কুদরতি সিদ্ধান্তের। সেই সিদ্ধান্তনামায় লেখা থাকবে—জান্নাত বা জাহান্নাম। এরকম আরও কতকিছুই যে জানতে হয় একজন মুমিনকে। সেই জানবার নন্দিত পাঠশালায় যুক্ত হলো—‘মৃত্যুর ওপারে : অনন্তের পথে’। আমাদের অনন্ত পথের যাত্রা আর শেষ ঠিকানা হোক বর্ণাঢ্য ও স্বর্গীয় স্বপ্নময়।
ইমাম আবু আবদুল্লাহ আল কুরতুবি বা আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আহমেদ ইবনে আবু বকর আল আনসারি আল কুরতুবি (আরবি: أبو عبدالله القرطبي) ছিলেন কর্ডোবার একজন বিখ্যাত মুফাসসির, মুহাদ্দিস ও ফকিহ। তিনি ফিকহের মালিকি মাজহাবের অনুসারী ছিলেন। তাফসীর আল কুরতুবি নামক কুরআনের তাফসির গ্রন্থের জন্য তিনি বেশি পরিচিত। ইমাম কুরতুবি ১৩শ শতাব্দীতে স্পেনের কর্ডোবায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন একজন কৃষক। ১২৩০ সালে স্প্যানিশ আক্রমণের সময় তার বাবা মারা যান। তরুণ বয়সে কুরতুবি পাত্র তৈরির জন্য তার পরিবারে মাটি আনার কাজ করেছেন। কর্ডোবায় তিনি তার শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ১২৩৬ সালে রাজা প্রথম ফার্নান্ডো কর্ডোবা দখল করে নিলে তিনি আলেক্সান্দ্রিয়া চলে যান। সেখানে তিনি হাদিস ও তাফসীর অধ্যয়ন করেন। এরপর তিনি কায়রো যান এবং মুনিয়া আবিল খুসাবে বসবাস শুরু করেন। বাকি জীবন তিনি এখানে অতিবাহিত করেছেন। ইমাম কুরতুবি তার সৌজন্যতা ও জীবনযাপন ধারার জন্য পরিচিত ছিলেন। ১২৭৩ সালে ইমাম কুরতুবি মৃত্যুবরণ করেন। মুনিয়া আবিল খুসাবে তাকে দাফন করা হয়। ১৯৭১ সালে তার মাজারের পাশে তার নামে মসজিদ নির্মিত হয়েছে।