হাদিস হলো ইসলামী শরীয়তের বিশ্লেষণধর্মী ভিত্তি যার আলোকে ব্যাখ্যায়িত হয়েছে গোটা শরীয়ত। হাদীস ও সুন্নাহ থেকে শরীয়তকে অনুধাবন করতে হলে সুন্নাহ বিষয়ে প্রগাঢ় পাণ্ডিত্য থাকা প্রয়োজন। আর এ বিষয়ে পাণ্ডিত্য অর্জন করতে হলে এর এর মূলনীতি সম্পর্কে প্রজ্ঞা অর্জন করা আবশ্যক।
একটা সময় ছিল দাড়ি টুপি পরিহিত ব্যক্তি ধর্মীয় বিষয়ে যা-ই বলত, মানুষ নির্দ্বিধায় সত্য ভেবে আমল করতো। যুগ পাল্টেছে, পাঠক সমাজ এখন সচেতন হচ্ছে। কারণ, ইলম চর্চা করতে গিয়ে মানুষ জানছে, ইসলাম দলিল-প্রমাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত। ইসলামী হুকুম-আহকাম থেকে নিয়ে ইসলামী ইতিহাসে অনুমান বা কল্পনার কোনো স্থান নেই। প্রতিটি কথার দালিলিক ভিত্তি রয়েছে। আর তাই সচেতন পাঠক মাত্রই কুরআন হাদীসের রেফারেন্স তালাশ করেন। পাশাপাশি হাদীসের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত হয়ে এরপর আতবে ইসলামের হুকুম আহকাম যেমন দলিল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, তেমনি ইসলামের অন্যান্য অঙ্গনেও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। এভাবে হাদীস অধ্যয়নেও রয়েছে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, যাকে আরবীতে বলা হয় ‘উসূলুল হাদীস’ এবং ‘উলূমুল হাদীস’। নীতিমালা এড়িয়ে হাদীসচর্চার প্রয়াসে পদস্খলন অবশ্যম্ভাবী।হাদীসচর্চার মূলনীতি নিয়ে আরবী ও উর্দূ ভাষায় বিস্তর কাজ রয়েছে। সে তুলনায় বাংলা ভাষায় খুবই সীমিত। জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগের বিশিষ্ট মুহাদ্দিস, গবেষোক মাও. আবুল ফাতাহ মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া হাদীস অধ্যয়নের মূলনীতিগুলোকে অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় খুব বিস্তর আলোচনা সমৃদ্ধ রচনা তৈরি করেছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইলম পিয়াসু সকল পাঠকদের জন্য অত্যউলুমুল হাদীসের উপর লেখা একটি অসাধারন গ্রন্থ।
মাওলানা আবুল ফাতাহ্ মুহাম্মাদ ইয়াহ্ইয়া রাহ. ১৯৫৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা থানাধীন মালিডাঙ্গা গ্রামে ফরায়েযী বংশের এক আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মাওলানা মিয়া হুসাইন রাহ.। নানার বাড়ি হালুয়াঘাট, সেখানকার ‘কুতিকুরা করুয়াপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে’থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিজ্ঞান নিয়ে অধ্যয়ন করেন। এরপর মাদরাসায় ভর্তি হন এবং ১৯৮২-৮৩ সালে তাকমিল (স্নাতকোত্তর) সমাপন করেন জামিয়া শারইয়্যাহ, মালিবাগ, ঢাকা থেকে। কওমি শিক্ষাবোর্ডের কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে ৪র্থ স্থান অধিকার করেন। কর্মজীবনে সিলেট জেলার গাছবাড়ী মাযাহিরুল উলূম ও জামিয়া শামসুল উলূম (পীরজঙ্গী) মাদরাসায় মুহাদ্দিস ছিলেন এবং মালিবাগ জামিয়ায় ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া আমৃত্যু বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড-এর সহকারী মহাসচিব পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থনীতির উপরে ‘ইসলামী অর্থনীতির আধুনিক রূপায়ণ’, বেফাকুল মাদারিসের অধীনে ফযীলত ১ম বর্ষে পাঠ্য, রাষ্ট্র বিজ্ঞানের উপরে ‘আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইসলাম’, ‘হাদীস অধ্যয়নের মূলনীতি’, ‘দারুল উলূম দেওবন্দ : ইতিহাস ঐতিহ্য ও অবদান’, (ফযীলত ২য় বর্ষে পাঠ্য), ‘স্রষ্টা ও তাঁর স্বরূপ সন্ধানে’, ‘ইসলামের দৃষ্টিতে পীর-মুরিদী’, ‘মুজাহাদা ফী সাবীলিল্লাহ’সহ বহু মূল্যবান গ্রন্থ লিখে গেছেন। । তিনি ২০ মে, ২০১৭ সালে ঢাকায় ইন্তেকাল করেন।