মঈন মুরসালিন। জন্ম ১০ জানুয়ারি ১৯৮৪ ঢাকার মগবাজার, মধুবাগে। ২০০৮ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ করে একাডেমিক পড়ালেখার সমাপ্তি।
পেশাজীবনে বেছে নিয়েছেন পুস্তক প্রকাশনা। গড়ে তুলেছেন ‘প্রতিভা প্রকাশ’ নামক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। সেই সাথে সম্পাদনা করছেন ছোটদের পত্রিকা ‘কানামাছি’।
ছেলেবেলা থেকে লেখালেখি করছেন। ১৯৯৮ সালে দৈনিকে প্রথম লেখা প্রকাশ। তারপর থেকে নিয়মিত লিখছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। উপন্যাস দিয়ে লেখালেখির সূচনা হলেও পরবর্তী সময়ে স্বতঃফূর্তভাবে ছড়া ও কবিতা রচনায় নিমগ্ন হয়ে পড়েন।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ- রোদের মেয়ে বৃষ্টি বোঝে না, নাকফুলে ঝুলে আছে ঋতুবতী চাঁদ, দুর্বোধ্য মায়ার শহর।
প্রকাশিত ছড়াগ্রন্থ- টুটি চেপে ধর, ফ্যান্টম ফটাশ, পাখির শহর পাখির বহর, ছড়া কাটে ছড়াকার বই কাটে ইঁদুরে, ১০০ ছড়া, অচিন দেশের বাঁশিওয়ালা, ছড়ার বাড়ি অচিনপুর।
প্রকাশিত ছোটদের গল্পগ্রন্থ- পরির হাতে নীল চুড়ি, আম্মুর জন্মদিন, মৎস্যখুকি, মৎসকন্যা, জাদুর পাখি, ফুলপরি ও কাজল।
প্রকাশিত উপন্যাস- জল জোছনার উপাখ্যান।
এ যাবৎ প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২১টি।
মঈন মুরসালিন: এক সাহিত্যিকের বহুমাত্রিক যাত্রা—
...............................................
মঈন মুরসালিন, সমকালীন বাংলা সাহিত্যের এক প্রতিশ্রুতিশীল নাম, যিনি তার সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রেখেছেন কবিতা, শিশুসাহিত্য এবং প্রকাশনা—এই তিনটি ভিন্ন ক্ষেত্রে। জন্ম ১৯৮৪ সালে, ঢাকার মগবাজারে। তিনি নিজেকে একজন মননশীল কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন, যার লেখনীতে ফুটে ওঠে গভীর জীবনবোধ এবং সমাজের নানা দিক। পাশাপাশি, তিনি একজন সফল শিশুসাহিত্যিক, যিনি শিশুদের জন্য নির্মাণ করেছেন এক কল্পনাবিলাসী ও আনন্দময় জগৎ। তাঁর বহুমাত্রিক কর্মের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যকে ঋদ্ধ করে চলেছেন।
কবি মঈন মুরসালিন
...............................................
কবিতা মঈন মুরসালিনের সাহিত্যিক পরিচয়ের মূল ভিত্তি। তার কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সরলতা ও গভীরতার এক দারুণ সমন্বয়। তিনি সাধারণ বিষয়বস্তুকেও অসাধারণ কাব্যিক ব্যঞ্জনায় তুলে ধরতে পারেন। তার লেখনীতে প্রেম, প্রকৃতি, মানবজীবন এবং সমসাময়িক সমাজের নানা অসঙ্গতি উঠে আসে। তার কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে "রোদের মেয়ে বৃষ্টি বোঝে না", "নাকফুলে ঝুলে আছে ঋতুবতী চাঁদ" এবং "দুর্বোধ্য মায়ার শহর" উল্লেখযোগ্য। এই গ্রন্থগুলোতে তিনি নিজস্ব কাব্যভাষা নির্মাণে সফল হয়েছেন, যা পাঠককে সহজেই আকৃষ্ট করে।
শিশুসাহিত্যিক মঈন মুরসালিন
...............................................
মঈন মুরসালিনের সাহিত্যিক প্রতিভার এক উজ্জ্বল দিক হলো তার শিশুসাহিত্য রচনা। শিশুদের মনোজগৎকে বোঝার অসাধারণ ক্ষমতা তার রয়েছে। তিনি ছড়া, কবিতা ও গল্পের মাধ্যমে শিশুদের জন্য এমন এক জগৎ তৈরি করেন, যেখানে আনন্দ, শিক্ষা এবং কল্পনা হাত ধরাধরি করে চলে। তার লেখা "ছড়ার বাড়ি অচিনপুর", "ফ্যান্টম ফটাশ", এবং "পাখির শহর" শিশুদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। "পরির হাতে নীল চুড়ি" গল্প সংকলনে তিনি রূপকথার সঙ্গে দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধ ও শিক্ষণীয় বিষয়গুলো মিশিয়ে দিয়েছেন, যা শিশুদের নৈতিক ও মানবিক বিকাশে সাহায্য করে। তিনি ছোটদের পত্রিকা 'কানামাছি' সম্পাদনার মাধ্যমেও শিশুসাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
প্রকাশক মঈন মুরসালিন
...............................................
একজন সফল লেখক হওয়ার পাশাপাশি মঈন মুরসালিন 'প্রতিভা প্রকাশ' নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা গড়ে তুলেছেন। প্রকাশনা জগতে তার আগমন লেখক হিসেবে তার অভিজ্ঞতারই একটি সম্প্রসারণ। তিনি কেবল নিজের বই নয়, বরং নতুন ও প্রতিভাবান লেখকদের কাজও প্রকাশ করছেন। একজন প্রকাশক হিসেবে তিনি সাহিত্য জগতে নতুন কণ্ঠস্বরকে সামনে আনতে এবং মানসম্মত বই পাঠকের হাতে পৌঁছে দিতে কাজ করছেন। এটি তার সাহিত্যপ্রেম এবং বাঙালি সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতির পরিচায়ক।
মূল্যায়ন
...............................................
একই সাথে কবি, শিশুসাহিত্যিক এবং প্রকাশক হিসেবে মঈন মুরসালিনের ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে। তার কবিতা পাঠকের মন ছুঁয়ে যায়, তার শিশুসাহিত্য শিশুদের মনে কল্পনার বীজ বুনে দেয়, এবং তার প্রকাশনা নতুন লেখকদের জন্য দরজা খুলে দেয়। তার এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করছে। তিনি তার কাজের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, একজন সত্যিকারের সাহিত্যিক কেবল সৃষ্টি করেই থেমে থাকেন না, বরং নতুন সৃষ্টির পথও তৈরি করেন।