"রাজবন্দীর রোজনামচা" শহীদুল্লা কায়সার রচিত একটি বিখ্যাত আত্মজৈবনিক গ্রন্থ, যেখানে তিনি তাঁর রাজনৈতিক বন্দিজীবনের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধিগুলো তুলে ধরেছেন। বইটি বাংলা সাহিত্যে রাজনৈতিক আত্মকথার এক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত।
📘 সারমর্ম:
"রাজবন্দীর রোজনামচা" মূলত শহীদুল্লা কায়সারের বিভিন্ন সময়ে জেলে থাকার অভিজ্ঞতার দিনপঞ্জি। এখানে তিনি নিছক একজন রাজবন্দী হিসেবে নিজের কষ্ট কিংবা সীমাবদ্ধতা বর্ণনা করেননি—বরং তার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন।
তিনি বইটিতে—
কারাগারের ভেতরের জীবনের নিষ্ঠুর বাস্তবতা তুলে ধরেছেন,
অন্যান্য বন্দীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, তাদের দুঃখ-কষ্ট, সাহস ও সংগ্রামের কথা বলেছেন,
উপনিবেশিক শাসনের দমননীতি, রাষ্ট্রযন্ত্রের অবিচার এবং গণতান্ত্রিক চেতনাকে তুলে ধরেছেন।
এই রোজনামচা পাঠকের মনে রাজনৈতিক সচেতনতা জাগাতে সাহায্য করে এবং স্বাধীনচেতা মানুষের সংগ্রামী মনোভাবকে শক্তিশালী করে তোলে।
🔍 মূল বৈশিষ্ট্য:
ভাষা সহজ, সরল এবং আবেগময়
বাস্তব ঘটনাভিত্তিক বর্ণনা
গভীর রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষণ
মানবিকতা ও প্রতিবাদী চেতনার মিশেল
📚 উপসংহার:
"রাজবন্দীর রোজনামচা" শুধুই একজন রাজবন্দীর ডায়েরি নয়, বরং এটি হচ্ছে একটি প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর, যা অন্যায়, নিপীড়ন ও শোষণের বিরুদ্ধে কথা বলে। এটি পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায় এবং তাঁকে ভাবায় – স্বাধীনতা, অধিকার ও মানবিকতার প্রশ্নে।
Shahidullah Kaiser শহীদুল্লা কায়সার ১৯২৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেনী জেলার মাজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। একজন বাঙালি লেখক ও বুদ্ধিজীবী। পুরো নাম আবু নঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তাঁর বাবার নাম মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ্ এবং মায়ের নাম সৈয়দা সুফিয়া খাতুন ৷ 'সরকারি মডেল স্কুলে' এবং পরে 'মাদরাসা-ই-আলিয়া'র অ্যাংলো পার্সিয়ান বিভাগে ভর্তি হন তিনি। ১৯৪২ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর উচ্চতর শিক্ষার জন্য তিনি ভর্তি হন 'প্রেসিডেন্সি কলেজে'৷ ১৯৪৬ সালে তিনি এখান থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ পাস করেন এবং অর্থনীতিতে এমএ পড়ার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ৷ একই সাথে তিনি 'রিপন কলেজে' (বর্তমানে সুরেন্দ্রনাথ আইন কলেজ) আইন বিষয়ে পড়াশুনা শুরু করেন৷ ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তাঁর বাবা ঢাকায় চলে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে এমএ ভর্তি হন। তবে এ ডিগ্রি লাভ করার আগেই পড়াশোনার সমাপ্তি ঘটান। শহীদুল্লা কায়সার ১৯৫৬ সালে কারাগার থেকে মুক্তি লাভের পর মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিচালিত 'সাপ্তাহিক ইত্তেফাক' পত্রিকায় যোগদান করেন৷ এভাবেই তিনি যুক্ত হন সাংবাদিকতায়। পরবর্তীতে তিনি ১৯৫৮ সালে 'দৈনিক সংবাদ'-এর সম্পাদকীয় বিভাগে সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন৷ ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর জেনারেল আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক আইন জারি হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ১৪ অক্টোবর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়৷ জননিরাপত্তা আইনে তাঁকে এ পর্যায়ে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত আটক রাখা হয়৷ মুক্তি লাভ করেই তিনি 'দৈনিক সংবাদ'-এর সম্পাদকীয় বিভাগে যোগ দেন৷ 'সাপ্তাহিক ইত্তেফাক' পত্রিকা থেকে সাংবাদিক জীবনের হাতেখড়ি হলেও তাঁর সাংবাদিক জীবনের সমস্ত কৃতিত্ব ও পরিচিতি 'দৈনিক সংবাদ'-কে ঘিরে আবর্তিত৷ শহীদুল্লা কায়সার দুইবার বিয়ে করেছিলেন। তিনি প্রথমে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যমন্ত্রী ও চিকিৎসক আর আহমেদের কন্যা জোহরা খাতুনকে বিয়ে করেন। বিবাহবিচ্ছেদের পরে শহীদুল্লা কায়সার ১৯৬৯ সালে পান্না চৌধুরীকে বিয়ে করেন। পান্না কায়সার ১৯৯৬-২০০১ সালের জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের একজন সাংসদ ছিলেন। তাঁদের দুইটি সন্তান, অমি কায়সার ও শমী কায়সার। শমী টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনেত্রী হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। পুরস্কার আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬২), বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬২) স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৮) মুক্তিযুদ্ধের শেষলগ্নে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তাঁর বাসা ২৯ বি কে গাঙ্গুলী লেন থেকে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তার স্থানীয় সহযোগী আল-বদরের হাতে অপহৃত হন। ধারণা করা হয় যে, অপহরণকারীদের হাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।