সাত হাজার তিনশো আট সাল। রোবটদের দখল থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করতে গিয়ে ভ‚গর্ভের বারো কিলোমিটার নিচে মারাত্মকভাবে আহত হয় নিরি। যখন বুঝতে পারে বাঁচার আর কোনো সম্ভাবনা নেই তখন হঠাৎ চোখের সামনে সে একজন পুরুষকে দেখতে পায়। পৃথিবী থেকে পুরুষদের নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে এক হাজার বছর আগে। অথচ কী অবিশ্বাস্য! তার সামনেই অপূর্ব সুন্দর আর মিষ্টি চেহারার একজন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। নাম বলছে নিরো। নিরি জানত পুরুষ কতটা ভয়ংকর আর নিষ্ঠুর হতে পারে! কত সহজে তার মতো নারীকে হত্যা করতে পারে! কিন্তু নিরো সে সম্পূর্ণ ভিন্ন! তাকে হত্যা করা তো দূরের কথা, উলটো সারাটা সময় তাকে বাঁচাতে চেষ্টা করছে। এক সময় সত্যি নিরি বেঁচে যায় এবং পৃথিবীর প্রচলিত আইন অমান্য করে হারিয়ে যায় নিষ্পাপ নিরোর নির্মল ভালোবাসায় ভরা অপূর্ব সুন্দর নিনিনের স্বপ্নময় রঙিন জীবনে! এদিকে ঘটনাক্রমে পৃথিবীর উপরিপৃষ্ঠের পুরুষ বিদ্বেষী নারীরা জেনে যায় ভ‚গর্ভস্থ জগৎ নিনিনের কথা। তারা একে একে হত্যা করতে থাকে নিনিনের সকল পুরুষের। শুধু বাদ থাকে নিরো। হন্যে হয়ে তারা তখন খুঁজতে থাকে নিরোকে। কিন্তু নিরি যে নিরোকে মরতে দেবে না। তাইতো সে উঠেপড়ে লাগে নিরোকে বাঁচাতে। কিন্তু বাস্তবতা যে বড়ো নিষ্ঠুর! কেউ যে তার পক্ষে নেই। শেষ পর্যন্ত অপূর্ব সুন্দরী নিরি কি পেরেছিল তার ভালোবাসার মানুষটিকে বাঁচিয়ে ভালোবাসায় ভরা সেই আগের পৃথিবীকে আবার ফিরিয়ে আনতে?
লেখক মোশতাক আহমেদ এর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ফরিদপুর জেলায়। পেশায় একজন চাকুরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও লেখালেখির প্রতি তাঁর আগ্রহ প্রচুর। এ পর্যন্ত সায়েন্স ফিকশন নিয়েই সবচেয়ে বেশি লিখেছেন। বাংলা সায়েন্স ফিকশন জগতে তার পোক্ত একটি অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও মোশতাক আহমেদ এর বই সমূহ ভৌতিক, প্যারাসাইকোলজি, মুক্তিযুদ্ধ, কিশোর ক্ল্যাসিক, ভ্রমণ ইত্যাদি জঁনরাতে বিভক্ত। যেকোনো একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতেই পছন্দ করেন। মোশতাক আহমেদ এর বই সমগ্র সংখ্যায় পঞ্চাশ পেরিয়েছে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত বই ছিল ‘জকি’। এটি একটি জীবনধর্মী উপন্যাস। ২০০৫ সালে এটি প্রকাশিত হয়। মোশতাক আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে ফার্মেসি বিভাগে, পরে আইবিএতে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। পড়াশোনার খাতিরেই হোক বা কর্মজীবনের তাগিদেই হোক, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেক ভ্রমণ করেছেন। সেসব ভ্রমণকাহিনীর আশ্রয়ে তাই ক্রমেই সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর লেখা ভ্রমণকাহিনীগুলোও। তাঁর সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শুধু লেখালেখিতেই গণ্ডিবদ্ধ নয়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাজারবাগের পুলিশ ও পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। সে ঘটনার ওপর ভিত্তি করে মোশতাক আহমেদ ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এটি ২০১৩ সালের মার্চ মাসে মুক্তি পায়। তাঁর পুরস্কারের ঝুলিতে এ পর্যন্ত রয়েছে ২০১৩ সালের কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের ছোটদের মেলা সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৪ সালের কৃষ্ণকলি সাহিত্য পুরস্কার, ২০১৫ সালের সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার এবং সর্বশেষ সংযুক্তি হিসেবে সায়েন্স ফিকশন বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭।