দ্বন্দুতত্ব বা ডায়ালেকটিকস্ মার্কস-এঙ্গেলস-এর উদ্ভাবন নয়, ইওরোপীয় দর্শনের সূচনা থেকেই তার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। সোক্রাতেস-পূর্ব দার্শনিক হেরাক্লিতাস ধাঁধার ভঙ্গিতে বলেছিলেন। একই নদীতে দুবার স্নান করা যায় না। তার কারণ কালপ্রবাহর সঙ্গে সঙ্গে জলপ্রবাহও এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না: সেটিও চিরচঞ্চল, গতিশীল।
পরিবর্তন, নিরন্তর পরিবর্তনই জগৎ-সংসারের নিয়ম; কোনোকিছুই স্থিতিশীল ও চিরস্থায়ী নয়-এখান থেকেই দ্বন্দ্বতত্ত্বর সূত্রপাত। হেগেল-এর দর্শন কিন্তু এক জায়গায় এসে থেমে গিয়েছিল, সেখানেই যেন ইতিহাসের শেষ। মার্কস-এঙ্গেলস-এর দর্শনচিন্তা শুরু হয়েছিল হেগেল থেকে, কিন্তু হেগেল-এর ভাবধারাকে উল্টে দিয়ে। মত্য থেকে স্বর্গে ওঠার বদলে তাঁরা নেবে এলেন স্বর্গ থেকে মর্ত্যয়। হেগেল-এর দ্বান্দিক ভাববাদ মার্কস-এঙ্গেলস-এর হাতে রূপ নিল দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ-এর।
দ্বন্দুতত্ত্বই মার্কসবাদ-এর নিজস্ব যুক্তিপদ্ধতি। আরিস্ততল-এর যুক্তিপদ্ধতি থেকে সেটি সম্পূর্ণ আলাদা। তার ভিত্তি স্থিতি নয়, গতি। হেগেল থেকেই তাঁরা নিয়েছিলেন এর প্রধান তিনটি নিয়ম বা নীতি; বিপরীতসমূহর ঐক্য ও বিরোধ, পরিমাণগত পরিবর্তন থেকে গুণগত পরিবর্তন, আর নিরোধ-এর নিরোধ। এই তিনটি নীতি নিয়ে উদাহরণ সমেত বিস্তৃত আলোচনা পাওয়া যাবে এই বইতে।
কিন্তু দ্বন্দুতত্ত্ব কি একান্তভাবেই পশ্চিমের সম্পত্তি। ভারতেও কি তার কোনো নিদর্শনই ছিল না? বৌদ্ধ দর্শনের ক্ষণিকবাদ আর জৈন দর্শনের আানেকান্তবাদ/স্যাবাদ-এর আলোচনা করে দেখানো হয়েছে ভারতেও দ্বন্দুতত্বর সূচনা হয়েছিল।
পরিশেষে, দ্বন্দ্বতত্ত্বর বিকাশে মাও সে-তুং-এর অবদানকে তার প্রাপ্য স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
বস্তুবাদ জিজ্ঞাসা ও মার্কসবাদ জিজ্ঞাসার সম্পূরক হলো দ্বন্দতত্ত্ব জিজ্ঞাসা। সম্পূর্ণ মৌলিক দৃষ্টিকোণ