ইন্টারনেটের কারণে বিনোদন এখন সহজলভ্য। স্মার্টফোন-ডেস্কটপ-ল্যাপটপ- টেলিভিশনের মাধ্যমে বিভিন্ন সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম বিনোদনকে এনেছে মানুষের হাতের মুঠোয়। এখন ইন্টারনেট ঘাটলে যেকোন তথ্য সহজেই খুঁজে পাওয়া যায় বলে বইয়ের পৃষ্ঠায় পাঠকের আগ্রহ কম। বিনোদনের অসংখ্য উপকরণের মাঝে পাঠকের অবসর মুহূর্তগুলো ভাগ হয়ে গেছে। বাংলা সাহিত্যের এরকম দুঃসময়ে বাংলা কবিতার পাঠক কারা? কেননা গল্প-উপন্যাসের পাঠক থাকলেও কবিতা তো অনেকেই দুর্বোধ্য বলে এড়িয়ে চলেন! আমরা কবিরাই কি নিজের কবিতাটি ছাড়া অন্যের কবিতাটি পড়ছি? আসলে কবিতার পাঠক তারাই যারা কবিতা ভালোবাসেন, যারা কবিতার মাঝে আত্মার প্রশান্তি খোঁজেন। বর্তমান ভিজ্যুয়াল মিডিয়ার যুগে পাঠকের রুচি বদলে যাওয়ায় কবিতা যেন নিজে পাঠ করার পাশাপাশি, শোনার এবং দেখার বিষয় হয়েও দাঁড়িয়েছে। তবে এটা ঠিক একজন আবৃত্তিশিল্পী যখন কোন কবিতা আবৃত্তি করেন তখন তিনি সেটিকে মূর্ত করে তোলেন, বইয়ের পৃষ্ঠায় আবদ্ধ শব্দের মাঝে প্রাণ সঞ্চার করেন। হয়তো এজন্যই পাঠকের মাঝে কবিতার আবৃত্তি বা ভিজ্যুয়াল রূপের এখন প্রচুর আবেদন। বর্তমানে অনেক আবৃত্তিশিল্পীই ব্যক্তিগত, পেশাগত বা পারিবারিক নানা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে হলেও প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়মিত আবৃত্তিশিল্প চর্চা করে সাহিত্যের একটি আলাদা মাধ্যম তৈরি করেছেন। তাঁরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কবিদের লেখা কবিতার রস-রূপ-আবেগ নিজেরা ধারণ করে তা কবিতাপ্রেমীদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এই কাব্যগ্রন্থখানা বিশেষভাবে তাদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত।
বাংলা সাহিত্যভুবনে কবি ও কথাশিল্পী সুমন সুবহান একাধারে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ও ছড়ার মাধ্যমে নিজস্ব সৃজনধারা গড়ে তুলেছেন। প্রেম, প্রকৃতি, নাগরিক জীবন, ইতিহাস ও নিঃসঙ্গতা তাঁর সৃষ্টির প্রধান উপজীব্য। ব্যক্তিগত অনুভব থেকে শুরু করে সামষ্টিক চেতনা পর্যন্ত—সবই তাঁর লেখার ভেতরে স্বাভাবিক প্রবাহে মিশে গেছে।
প্রকাশিত গ্রন্থাবলি
গল্প : ঝরাপাতার গান (২০১৩)
কাব্যগ্রন্থ : নক্ষত্র ভেজা দিন (২০১৭), যে জীবন ফড়িঙের (২০১৮), চেয়েছি শুধু শূন্যতা (২০১৮), জলের কাছে যাবো (২০২১), যে তুমি করেছো হরণ (২০২২), বন্ধনহীন গ্রন্থি (২০২২), বসন্ত এসে ছুঁয়ে গেছে (২০২৩), তোমার নামে নৌকা ভাসাই (২০২৪), এভাবেই বিষাদে সংলাপে (২০২৫)
ছড়া : ছড়িয়ে দেয়া ছড়া (২০২২)
উপন্যাস : পাভেলের নানাবাড়ি (২০১৭), গ্রাউন্ড জিরো (২০২২)
সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বিচরণ করলেও তাঁর মূল পরিচয় কবিতায়। আধুনিক নাগরিক জীবনের ক্লান্তি, প্রেমের অপূর্ণতা, স্মৃতির ভার আর প্রকৃতির প্রতি অনুরাগ—এসব তাঁর কবিতায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আবার উপন্যাস ও গল্পে তিনি ধরেছেন সময়ের স্রোত, বাস্তবতার টানাপোড়েন এবং সমাজ-ইতিহাসের নানা অনুষঙ্গ।
সুমন সুবহানের লেখায় একদিকে আছে অন্তর্মুখী বিষাদ, অন্যদিকে আছে জীবনের প্রতি গভীর অনুরাগ। ফলে তিনি সমকালীন বাংলা সাহিত্যে এক বিশেষ কণ্ঠস্বর হিসেবে পাঠক-সমালোচকদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন।