দলমত নির্বিশেষে বিতর্কের উর্ধ্বে উঠে সাধারণ মানুষের স্মৃতিতে মুক্তিযুদ্ধকে জাগিয়ে তোলা এবং মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কাজে সহায়তা করাই হবে সংগঠনটি প্রধান কাজ। সে লক্ষ্যে ওই বছরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ভিন্ন আঙ্গিকে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অনুসন্ধান কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়— গণহত্যা স্থান, যুদ্ধস্থানে মোমবাতি জ্বালিয়ে স্বাধীনতা দিবস পালনের। এতে গণহত্যা স্থান, যুদ্ধস্থানও চিহ্নিত হবে, আবার স্থানীয় জনগণকেও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিতে ফেরানো যাবে। শুরু হয় সংশ্লিষ্ট এলাকায় কমিটি গঠন। ওই কমিটিই স্থানীয় ভাবে অর্থ সংগ্রহ করে শহিদদের তালিকা করে তা জনসমক্ষে টানিয়ে দেয়। এতে জনমনে বিপুল সাড়া লক্ষ্য করা যায়। জনগণের মধ্য থেকে পাওয়া যায় কাজ করার গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, তা হলো— ‘মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য’ শহিদ পরিবার এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। কর্মসূচি সফল করতে স্কুল-কলেজে যাওয়া হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে সাড়া মেলে বিপুল। তারাই ফুল সংগ্রহ করে, তা নিয়ে যায় সংশ্লিষ্ট পরিবারকে কৃতজ্ঞতা জানাতে। ‘ফুল দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ’ কর্মসূচি পালন করার সময় পরিবারগুলো আবেগ তাড়িত হয়ে প্রত্যুত্তর দেয়। সে আবেগে সংক্রমিত হয় শিক্ষার্থীরাও। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নেয় প্রতি বছর তারা ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ‘কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর্মসূচি’ পালন করবে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জনগণের এই আবেগকেই উস্কে দিতে চায় সিরাজগঞ্জের গণহত্যা অনুসন্ধান কমিটি।
সাইফুল ইসলাম- জন্ম ১৯৫২ সালের ১৪ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ সদর থানার গজারিয়া গ্রামে। বাবা জালালউদ্দিন তালুকদার এবং মা সফুরা খাতুন। স্কুল জীবনেই জড়িয়ে পড়েন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগে। ১৯৬৮ সালে ভর্তি হন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে। স্বায়ত্তশাসনের মিছিল থেকে স্বাধীনতার স্লোগান, স্লোগান দিতে দিতে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান। স্বাধীনতার পর স্নাতক পাস করেন পাবনার শহিদ বুলবুল কলেজ থেকে ১৯৭২ সালে। স্বাধীন বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত রাখেন নিজেকে। রাজনীতির প্রয়োজনে ছড়া, ছোটগল্প, নাটক লিখতেন। সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পর ১৯৯২ সালে চলে যান ঢাকায়, যুক্ত হন সাংবাদিকতায়। কাজ করেন সাপ্তাহিক আগামী, পাক্ষিক তারকালোক, দৈনিক সমকাল, মানবকণ্ঠ, প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকায়। ২০১৫ সালে রাজধানীর অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে আসেন নিজ শহর সিরাজগঞ্জে। গড়ে তোলেন সিরাজগঞ্জের গণহত্যা অনুসন্ধান কমিটি। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করছেন। প্রতিকুল পরিবেশেও স্বপ্ন দেখেন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার। তার প্রথম ছড়ার বই 'টিক টিক টিক টিক' প্রকাশ পায় ১৯৯৩ সালে। ছড়া, ছোটগল্প, উপন্যাস, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গ্রন্থ মিলিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ত্রিশটি।