‘শেফালিকে ছেড়ে দাও’ একটি ছোটগল্পের সংকলন হলেও এর পটভূমির ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে ভয়াবহ করোনা, বিক্ষুব্ধ অনিশ্চিত একটি সময়, সমুখেই মুখব্যাদান করা মৃত্যু, এবং ‘সময় কাটেনা, কী যে করি’, একটি অবস্থা। সেই দুর্বিষহ সময়ে হাতে টেনে নিই, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ; দলিলপত্র’ খণ্ডগুলি। সেখানে খুঁজে পাই মুক্তিযুদ্ধকালীন কিছু মানুষের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভয়াবহ বর্ণনা। সেইগুলো পড়ে মনে হয় এই মানবজীবন বুঝি শুধু দুঃখ, হাহাকার আর স্বজন হারানোর শোক দিয়ে গড়া এবং এর বেশির ভাগই মানবসৃষ্ট আগ্রাসন দিয়ে রচিত। তাদের মুখ দিয়ে বলা কথাগুলিই আমি সযতেœ আমার কথা সাহিত্য দিয়ে মুড়ে পাঠকের সমুখে হাজির করবার চেষ্টা করেছি। এসব ঘটনার দাবিদার এবং ভুক্তভোগী তারাই যাঁরা নিজেরা এইসব ঘটনাবলির শিকার। আমার নিজের কোনো কৃতিত্ব নেই। আমি শুধু সাধারণ পাঠকদের সমুখে তাঁদের দুঃখের ইতিহাসগুলো আবার ছড়িয়ে দিলাম।
এই সংকলনের ভেতরে একটি বিশেষ ঐতিহাসিক গল্পও আছে, বন্ধবন্ধু ও বঙ্গমাতার জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে সেই গল্পটি রচিত হয়েছে। গল্প আকারে এই লেখাটি লিখে আমি খুব আনন্দ উপভোগ করেছি। মানুষের জীবনাভিজ্ঞতাই যে পরিশেষে গল্প হয়ে যায় এই বোধটিও আমার এই বয়সে হয়েছে।
বইয়ের কলেবর একটু বড় হলেও পুরো করোনা সময়ের ছোটগল্পের ফসল এই দুই মলাটে ভরে দিয়ে আমি অনেকটা স্বস্তি অনুভব করছি!
মেলার পাঠকের হাতে এই বই কখনো দেখলে আমার খুব আনন্দ হবে।
আনােয়ারা সৈয়দ হক মাত্র বারাে বছর বয়সে হাতে তুলে নিয়েছিলেন কলম। সেই থেকে কোনােদিন তার লেখা বন্ধ হয় নি। মুক্তিযুদ্ধের। সময় যখন তার মুখ ছিল বন্ধ এবং তিনি। পাকিস্তানি মেডিক্যাল কোরে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন, তখনাে তিনি লিখে। গেছেন বন্দী জীবনের দৈনন্দিন সংগ্রামের কথা। সেই সংগ্রাম, সেই নীরব অশ্রুপাত, স্বামী কবিসব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হক-কে নিরাপদে দেশের বাইরে পাঠাবার এবং সফল হওয়ার যে ইতিহাস মূলত পরবর্তী জীবনে তাঁকে জীবন সম্পর্কে, মানুষের বেঁচে থাকা সম্পর্কে, বন্দী মানুষের। মুক্তিসংগ্রাম সম্পর্কে শিখিয়েছে অনেক। নিরন্তর সাহিত্য রচনার ফলশ্রুতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা এবং পদক। তার। ভেতরে অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার, চাদের হাট পুরস্কার, শিশু একাডেমি পুরস্কার, বাংলা একাডেমি কবির চৌধুরী শিশু সাহিত্য পুরস্কার, ইউরাে পুরস্কার, অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার, পদক্ষেপ সম্মাননা, মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার, অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার ইত্যাদি। বিশেষ করে ২০০৯ সালে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং দু’হাজার উনিশ সালে পেয়েছেন একুশে পদক।