২০১১ সালের ফেব্রুয়ারীতে লাইবেরিয়া যাই ব্র্যাকের স্বাস্থ্য প্রোগ্রামে যোগ দিতে। লাইবেরিয়া সম্পর্কে আগে থেকে তেমন কিছুই জানতাম না। জানতাম যুদ্ধবিদ্ধস্ত আফ্রিকান একটি দেশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং পুলিশ সেখানে জাতিসংঘ মিশনে দায়িত্ব পালন করে। আফ্রিকা মহাদেশকে জানা এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের আগ্রহ আমাকে লাইবেরিয়া নিয়ে যায়। লাইবেরিয়া দেশটি বাংলাদেশের চেয়েও ছোট। ২/৩ টা মাঝারী আকারের জেলা বাংলাদেশ থেকে বাদ দিলে লাইবেরিয়ার সমান হবে। লোক সংখ্যা ৩৫ লাখ, সরকারি হিসেবে। বাস্তবে তা ৪৫ লাখ হতে পারে। পশ্চিম আফ্রিকার দক্ষিণ তলায় আটলান্টিক মহাসাগরের তীর ঘেষে পাহাড়, জংগল আর বিশাল সমভূমি নিয়ে শুয়ে আছে লাইবেরিয়া। ১৫টি কাউন্টি নিয়ে লাইবেরিয়া। কাউন্টি হলো বাংলাদেশের জেলার অনুরূপ। মনরোভিয়া হচ্ছে এর রাজধানী। মনরোভিয়ার জনসংখ্যা ১০-১২ লাখ মনে করা হয়। উত্তর পশ্চিমে সিয়েরা লিওন, পূর্বে গিনি এবং পূর্ব দক্ষিণে আইভরিকোষ্ট লাইবেরিয়াকে ঘিরে আছে নিকট প্রতিবেশীর মতো। পশ্চিম এবং দক্ষিণ পশ্চিমে শুধুই অতল সাগর আটলান্টিক। এসেই যেটা শুনেছি, লাইবেরিয়া হলো একটা ক্ষুদ্র ইউএসএ। এখানকার রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে আমেরিকার জনজীবনের প্রতিচ্ছায়া দেখা যায়। দিন যত গেছে কথাটায় সত্যি আছে বলে মনে হয়েছে। আফ্রিকার আদিবাসী জনগোষ্ঠির জীবনাচার এবং আমেরিকা ফেরৎ মুক্ত দাসদের আমদানীকৃত ধ্যান ধারণা ও জীবন-যাপন মিলেমিশে লাইবেরিয়ার নিজস্ব একটা কালচার দাঁড়িয়ে গেছে।
হারুন-অর-রশিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য। অবিভক্ত বাংলা, ভারত, পাকিস্তানি ২৪ বছরের শাসন ও বাংলাদেশের রাজনীতি এবং এর গতিধারা ও রাজনৈতিক উন্নয়ন তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র। বাঙালির রাষ্ট্রচিন্তা ও স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্র গঠন, অন্য কথায়, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ তাঁর গবেষণার মূল আকর্ষণ। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডব্লিউ এইচ মরিস-জোনস-এর তত্ত্বাবধানে ১৯৮৩ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে তাঁর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিনি পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন। এ ছাড়াও তিনি সুইডেনের উপসালা ও জাপানের রিউকোকু (কিউটো) বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা করেন।