আমাদের মাতৃভাষা বাংলার কথা বলতেই মনে একটা বিশেষ গর্ববোধ জেগে ওঠে।
এই গর্ববোধের মূল কারণ, এই ভাষা আমাদের আবেগ, ভালোবাসা, চেতনা, আমাদের স্বাধীনতা।
যে-ভাষা আমাদের অহংকার, ঐতিহ্য, সেই বাংলাভাষার বিষয়ভিত্তিক অভিধানসংখ্যা কিন্তু মর্যাদার নয়।
ইংরেজিতে যে-সব শব্দ প্রাকৃতজনোচিত বা কথ্য কিংবা আঞ্চলিক বলে বিশেষিত, তা গ্রাম্যপর্যায়ভুক্ত। জীবিত ভাষায় এর ব্যবহার অনিবার্য। অভিব্যক্তি প্রকাশের জন্য যে ভাষার আশ্রয় নিতে হয়, এবং সাধারণের উপভোগ্য যে-সকল কাব্য, গাথা, ছড়া, গান ইত্যাদি সাধারণবোধ্য ভাষায় বলার ও লেখার প্রয়োজন হয়, প্রাচীন বাংলাসাহিত্যে সেই ভাষায় এরকম গ্রাম্যশব্দের সংখ্যা অসংখ্য। আধুনিক সাহিত্যেও তার অভাব নেই। প্রাচীন বাংলা যাঁদের দ্বারা পুষ্টিলাভ করেছিল, তাঁদের অধিকাংশ ছিলেন সংস্কৃতভাষা জ্ঞানহীন সমাজের নীচুশ্রেণীর লোক। সংস্কৃত-প্রাকৃতশব্দমিশ্রিত গ্রাম্যভাষাই তাঁদের অবলম্বনীয় ছিল। সুধীসমাজে বাংলা যে সাদরে গৃহীত হয়নি, তার প্রমাণ 'অপভাষা' নামেই পাওয়া যায়।
অভিধানে গ্রাম্যশব্দসহ নানাবিধ দ্যোতনাব্যঞ্জক শব্দ সঙ্কলনের অভাব এখনো প্রকট। কিন্তু যে-ভাষার মর্যাদা আজ বিশ্ববিস্তৃত, সে-ভাষার আভিধানিক চর্চা এখনো দরিদ্র।
সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়মবদ্ধ আড়ষ্টভাব ঘুচিয়ে বাংলাভাষাকে অধিকতর ব্যাপক, সরল, স্বাভাবিক ও শক্তিশালী করে তোলার উদ্দেশে অনেক সহজতর ও বিষয়ভিত্তিক অভিধান রচনা এখন সবচেয়ে জরুরি।
যে-কোনো ধরনের অভিধান ভাষাকে জীবন্ত ও শক্তিশালী করে তোলে। বাংলাভাষার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিসম্মানলাভের শুভমুহূর্তে এই অভিধান প্রকাশ অনেকটাই গর্বের, ভালোবাসার।
আমাদের আটপৌরে জীবনের সুখ দুঃখ, হাসি কান্না, প্রেমালাপ কিংবা প্রতীকী কোনো অভিব্যক্তি প্রকাশের শব্দ হিসেবে এই অভিধান কিছুটা হলেও