ভূমিকা কবিতা অনু্বাদের ক্ষেত্রে মুনির নানা মত আছে। কেউ সাদরে গ্রহণ করেন, কেউ বা এর থেকে দূরে থাকতে চান। আমি অবশ্য এর অপরিহার্যতার উপরে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। অতএব বাংলা কবিতার ইংরেজী আর ইংরেজী থেকে বিভিন্ন দেশের কবিতা বাংলায় অনুবাদ করে আসছি বহুদিন ধরে। সেই ধারাবাহিকতার ফসল এই গ্রন্থ। ‘বর্তমান বিশ্বের কবিতা’ শিরোনামের প্রবন্ধকেই এই গ্রন্থের কার্যকরী ভূমিকা হিসেবে ধরে নেয়া যায়। হয়তো বইয়ের নামও তাই রাখা যেতো। কিন্তু বিশ্ব কবিতা বলতে যে বিপুল সংখ্যক কবিদের সৃষ্টিকর্মকে বোঝানো হয়, এই বই তার মাত্র কয়েক ছত্রই ধারণ করতে পেরেছে। তাই গ্রন্থের শিরোনাম : বিশ্ব কবিতা কয়েক ছত্র। প্রসঙ্গত, বাঙালী কবির বোদলেয়ারকে জেনেছিলেন বুদ্ধদেব বসুর অনুবাদের ভেতর দিয়ে। কিন্তু ইংরেজী অনুবাদের সাথে মিলিয়ে দেখলে ধারণা করা অসম্ভব নয় যে তখনকার সামাজিক অবস্থান মনে রেখে বুদ্ধদেব বসুকেও রাখ-ঢাক করতে হয়েছিল। ফলতঃ কবিতাগুলো বোদলেয়ারের ছায়া অবলম্বনে যতোটা বুদ্ধদেবীয় হয়ে উঠেছিল ঠিক ততোট বোদলেয়ারীয় হয়ে ওঠেনি। এই বইয়ে অনূদিত বোদলেয়ারের ছ’টি কবিতা ‘ল্য ফ্লর দ্যু মাল’ প্রকাশের পরপরই যাদের নিষিদ্ধ করা হয়- থেকে সেই আবরণটি তুলে নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এখানে সংযোজিত প্রায় সব অনবাদই ইতিপূর্বে কোনো-না কোনো পত্রিকায় প্রকাশিত । তবে চলমান প্রক্রিয়ায় সেসব লেখায়ও কিছু সম্পাদনা করা হলো। সাহিত্য বিকাশের ফজলুর রহমান একজন যত্নবান প্রকাশক। এই বইটি প্রকাশের দায়িত্ব তুলে নেয়ার জন্যে তাঁর প্রতি আমি যথেষ্ট কৃতজ্ঞ।
হাসানআল আব্দুল্লাহ নতুন ধারার সনেটের প্রবর্তক, নাম: স্বতন্ত্র সনেট। মানুষ ও মহাবিশ্বের চলমানতা নিয়ে তিনি লিখেছেন মহাকাব্য, নক্ষত্র ও মানুষের প্রচ্ছদ (অনন্যা, ২০০৭)। ২০১৪-এর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর নির্বাচিত কবিতার দ্বিতীয় সংস্করণ। ১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমি থেকে বেরিয়েছে কবিতার ছন্দ, ২০১১ সালে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করেছে মাওলা ব্রাদার্স। তাঁর দ্বিভাষিক গ্রন্থ ব্রেথ অব বেঙ্গল, ও আন্ডার দ্যা থিন লেয়ারস অব লাইট প্রকাশ করেছে নিউইয়র্কের ক্রস-কালচারাল কমিউনিকেশন্স। মূলত কবি, কিন্তু সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় প্রকাশিত তাঁর গ্রন্থ সংখ্যা ৩৫। হাসানআল আব্দুল্লাহ ২০১৬ সালে চীন সরকারের আমন্ত্রণে সে দেশে অনুষ্ঠিত।আন্তর্জাতিক সিল্ক কেউ কবিতা উৎসবে যোগ দেন এবং একই বছর বিশ্ব কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্যে তিনি ইয়োরোপীয় কবিতা পুরস্কার 'হোমার মেডেল'-এ ভূষিত হন। স্বতন্ত্র সনেটের জন্যে ২০১০ সালে তিনি পান লেবুভাই ফাউন্ডেশন পুরস্কার। ২০০৭ সালে তিনি নিউইয়র্কের অন্যতম প্রধান শহর কুইন্সের পোয়েট লরিয়েট ফাইনালিস্টের সম্মান পান। ইংরেজী, ফরাসী, স্প্যানিশ, কোরিয়ান, চাইনিজ, পোলিশ ও ভিয়েৎনামী ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর কবিতা; স্থান পেয়েছে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক অ্যান্থোলজিতে। আমন্ত্রিত কবি হিসেবে কবিতা পড়েছেন মার্কিন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি আন্তর্জাতিক দ্বিভাষিক কবিতা পত্রিকা শব্দগুচ্ছ সম্পাদক এবং ১৯৯৮ সাল থেকে নিউইয়র্ক সিটির হাইস্কুলে গণিত শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।