নিউইয়র্ক থেকে বলছি ভূমিকা থেকে প্রিয় পাঠক, শুভেচ্ছা নিন। আপনাদের জন্যেই আমার লেখা। আপনারাই আমার অক্সিজেন। আপনাদের মাঝেই আমি বেঁচে থাকতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমার ভাবনা। এই ভাবা ভাবির ভিতর দিয়ে কখন যে আমরা চলে যাই কেহ তা জানি না। বিশ্বব্যাপি এখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। চোখের সামনে মানুষগুলো মরছে অহরহ। প্রবাস জীবনে এসে অনুভব করলাম মাতৃভূমি কি। দেশের জন্য এত ভাবিনি আগে কখনো। গভীর রাতে স্বপ্নে লাফিয়ে ওঠি, আহা! আমার দেশ কই। আমি এখানে কেন? যেখানে আমার মা-বাবা ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন বন্ধুরা, না জানি তারা কেমন আছে এখন। মা'কে কবর দিয়ে এসে দেখেন বাবা নেই। এক রুমে মৃত স্বামী, আরেক রুমে স্ত্রী সন্তান নিয়ে একা একা কাঁদছেন। গিয়ে একটু দেখতেও পারছেন না তিনি। পুলিশ শেষে এসে স্বামীকে প্লাষ্টিক কভারে আটকে রেখেছেন। আমরা সবাই এখন মৃত্যু পথের যাত্রী। কেউ জানে না কার আগে কে যায়। কুকুরের মনিব মারা গেছেন, কুকুর হাসপাতালে ৩ মাস অপেক্ষায় থাকে মনিবের জন্যে। তাকে কিছুতেই সরানো যায় না সেখান থেকে। অনেকে খুশী হয়ে তাকে খাবার দেন। আর ছেলেরা রাস্তায় মাকে জীবিত ফেলে চলে যায়। শেষে মায়াবি পুলিশ মাকে উদ্ধার করে কোলে তুলে নেয়। তাই ভাবছি, করোনা আসবে না কেন? রাস্তা ঘাট দোকান পাট অফিস আদালত সব বন্ধ। মানুষ জন নেই কোথাও। নিউইয়র্ক নগরী যেন এক মৃত্যুপুরী! সেই মৃত্যুপুরীতে আছি আমিও। মৃত্যু যখন কাছাকাছি এসে যায় মানুষ তখন বাঁচতে চায়, বাঁচতে চাই আমিও। এ্যাম্বুলেন্সগুলো দৌড়াচ্ছে হৃদয় বিদীর্ণ করে। সাইরেনের শব্দে কেঁপে উঠছি...
মোসাদ্দেক চৌধুরী আবেদ বোরহানউদ্দিন উপজেলার মির্জাকালু গ্রাম থেকে উঠ আসা একজন মানুষ। ব্রিটিশ আমলের সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে অবিভক্ত ভারতের বিভিন্ন স্থানে চাকরিরত ছিলেন। সেখান থেকে চলে এসে জনগণের অনুরোধে ভোলার মির্জাকালুতে বিশ একর জায়গার ওপর বিরাট দ্বিতল বিল্ডিং বিশিষ্ট মির্জা হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করে জনগণ ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তোলা সরকারি স্কুল আর মির্জাকা স্কুল ছাড়া কোনো খানা পর্যায়ে এমন বিল্ডিংয়ের স্কুল ছিল না সেকালে। সবগুলো স্কুল ছিল টিনশেডের। সে আমলে সারা ভোলা মহকুমায় হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি স্কুল ছিল। তাঁর দূরদর্শিতায় মির্জাকালু হাই স্কুলের নাম-ডাক ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ইংরেজি ও বাংলায় তিনি অনলবর্ষী বক্তা ছিলেন। তাঁর হাতে গড়া বহু ছাত্র-ছাত্রী দেশের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠন হিসেবে ঢাকা ও চিটাগং, বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়োজিত রয়েছেন। শিক্ষাবিস্তারে তাঁর পিতার অবদান তোলার শিক্ষিত সমাজের কাছে আজও স্মরণীয় আছেন। সর্বক্ষেত্রে তাঁর পদচারণ ছিল উল্লেখ করার মতো। তৎকালীন ভোলার কৃতি সন্তান আইনমন্ত্রী বিচারপতি আবদুল হাই চৌধুরী মির্জাকালু হাই স্কুল পরিদর্শনে এসে স্কুলের শিক্ষা ও বাহ্যিক পরিবেশ দেখে মির্জাকালু হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল হান্নান চৌধুরীকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের পদকটি তাঁর হাতে তুলে দেন। ভোলা জেলার কোনো শিক্ষক এমন সম্মান অর্জন করতে পারেননি সে সময়। তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার থেকে সবাই একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হিসেবে তাকে সম্মানের চোখে দেখতেন।