"ক্ষুদ্র জাতিসত্তার লৌকিক সংস্কৃতি" শীর্ষক একটি গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। জন্মগ্রহণ করার পর থেকেই সামাজিক জীব হিসেবে মানুষকে কতগুলো পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। এই পর্যায়গুলো অতিক্রমকালে মানুষ প্রকৃতির সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকে। আমাদের দেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরাও তার ব্যতিক্রম নয়। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে জীবনচক্রের বিভিন্ন পর্যয়ে নিজ নিজ সমাজের রীতি অনুযায়ী তারা যুক্ত হয় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের সাথে যার জড়িয়ে রয়েছে বংশ পরম্পরায় প্রচলিত লোকায়িত জ্ঞান। এই লোকজ্ঞানকেই আমরা লৌকিক সংস্কৃতি হিসেবে চিহ্নিত করে থাকি। বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সমাজে নানামুখী পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। শিল্পায়ন, নগরায়ন, ধর্মীয় ভাবনা-চিন্তা প্রভাবিত করছে তাঁদের লৌকিক সংস্কৃতিকে। এর মাধ্যমে তাঁরা বৃহত্তর সমাজ বা মূলধরার সাথে একাত্ম হয়ে হারাতে বসেছে তাঁদের নিজস্ব সত্তা, বিশ্বাস, ঐতিহ্য বা লোকায়ত জ্ঞানকে। আজ বিশ্বব্যবস্থার যান্ত্রিকতর মাঝে মূলধারার জনগোষ্ঠী যখন বিভিন্ন সামাজিক সঙ্কটে ভুগছে তখন তাঁরা চলে যাচ্ছে আরো প্রান্তিক আচ্ছাদনে। তাই সময় হয়েছে সহস্রাব্দের উন্নয়নে এ সকল লোকায়ত জ্ঞান সংগ্রহ ও সংরক্ষণের। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই নৃবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগ তথা সমতলে বসবাসরত সাঁওতাল, ওরাঁও, পাহাড়িয়া, রাজোয়ড়, তেলী, তুরি ও মাহালে সম্প্রদায়ের উপর এই বইটি রচিত হয়েছে। প্রয়োজন রয়েছে বাংলাদেশের অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিসত্তার উপর একই ধরনের গবেষণার গবেষক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী তথা অনুসন্ধানী পাঠকদের কাছে বইটি আদৃত হবে বলে আমার বিশ্বাস।