কিছু বই পাঠকের পছন্দের বই হবার চেষ্টা করে আর কিছু বই পাঠকের পছন্দকে স্বতন্ত্র উচ্চতায় নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। এই বই পাঠকের বোধ ও চিন্তাকে খুশি করার চেয়ে বরং আলোকিত করার প্রতি অধিক মনোযোগী। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদদের শিরোমনি ইবনে খালদুনের চিন্তার নানা দিগন্ত এ গ্রন্থের শিরোনাম-বিষয় হলেও বইটিতে নানাভাবে হাজির হয়েছে ইতিহাস, সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতি , শিল্প-সাহিত্য এবং বিচিত্র তত্ত্ব ও ভাবধারা।
ইতিহাসের নামে প্রতিষ্ঠিত বহু মিথকে বইটি যেমন চ্যালেঞ্জ করে, তেমনি সে বিচিত্র চিন্তা, তত্ত্ব ও মতবাদকে বিচারের আয়নায় হাজির করে । তত্ত্বীয় প্রবণতা এই গ্রন্থের প্রধান চরিত্র হলেও অর্থনীতি, রাজনীতি বা পরিবেশের মতো নানা প্রসঙ্গ এতে আলোচিত হয়েছে । বেশির ভাগ আলোচনা সরাসরি কিংবা প্রচ্ছন্নভাবে ইবনে খালদুনের দৃষ্টি ও মেজাজের ছায়া ধরে অগ্রসর হয়েছে।
আধুনিকতার সুর ও সার কীভাবে সত্য ও স্বাভাবিকতাকে বিব্রত করে, কীভাবে সে জীবনের প্রাণসত্তাকে লাঞ্চিত করে, এর প্রতি বইটি যেমন মনোযোগী , তেমনি সে হাজির করে বিশ্বব্যবস্থার পশ্চিমা রূপকল্পের বিকল্প আদর্শের বৈশিষ্ট। ফলে বইটিতে আলোচনা যে খাতেই যাক, ইসলামী জীবনাদর্শের পথরেখা চিন্তার গতিকে শাসন করেছে।
বইটির প্রবন্ধ/নিবন্ধগুলিতে যতোটা সমকালীন চরিত্র আছে , তার চেয়ে বেশি আছে এমন সব প্রসঙ্গ, যা আপনাকে কালাতিক্রমী বৈভবে সমৃদ্ধ করতে উদগ্রীব। উভয় বাস্তবতাকে যার যার পাওনা বুঝিয়ে দিতে চায়, এমন গ্রন্থই তো অগ্রসর পাঠকের চাওয়া।
মুসা আল হাফিজ একাধারে কবি, তাত্ত্বিক, গবেষক, সুবক্তা। তরুণদের মধ্যে তার প্রভাব ব্যাপক। কবিতা, গবেষণা, অনুবাদ, কথাশিল্প, ছড়া, আত্মকথন, কলামসহ নানা খাতে তার কলম স্রোতবাহী। দর্শন, ইতিহাস, রাজনীতি, ধর্মতত্ত্ব, সংস্কৃতি, সীরাত ও আন্ত:সভ্যতা বিষয়ে ইতোমধ্যে একজন একাডেমিশিয়ান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। দ্রোহ, প্রেম, জীবনরহস্য, আবহমান সংস্কৃতি এবং পরমের তত্ত্বসন্ধান ও আত্মমন্থনের মধ্যে তার কবিতা ও সাহিত্যের প্রবাহ। সুফি-ভাববাদী মুসা আল হাফিজ প্রকাশের ধরণে দার্শনিক। কাব্যিক মেজাজে পোস্টমডার্ন, সিম্বলিক ও সুররিয়্যালিস্ট। তবে ব্যক্তি চিন্তার তিনি পোস্ট-কলোনিয়াল। নানাবিষয়ে তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ষাটের অধিক। তিনি ১৯৮৪ সালের ৫ অক্টোবর সিলেটের বিশ্বনাথে জন্ম গ্রহণ করেন।