"Uneasy lies the head that wears a crown."-অর্থাৎ,মুকুট পরিহিত ব্যক্তি স্বস্তিতে ঘুমাতে পারে না।এমনটাই শেকসপিয়ার বলেছেন।যদিও,বইটি পড়ে আমার মনে সন্দেহ উঁকি দিচ্ছে যে- মুকুট পরিহিত ব্যক্তি স্বস্তিতে ঘুমোতে পারেন না? নাকি কাউকে স্বস্তিতে ঘুমোতে দেন না? সে বিষয়ে! কেন এই কথা বলছি? চলুন দেখে নেয়া যাক...
ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী বিষয়ক আলোচনা করে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছেন ব্রি জে এম সাখাওয়াত হোসেন(অব.)।একবিংশ শতকের গোড়ার দিকে বিশ্ব রাজনীতির অস্থিরতা নিয়ে নিয়ে তিনি বেশ আলোচনাধর্মী লেখালেখি করেন।বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক প্রবন্ধসমূহ তার এই বইটতে সংকলিত হয়েছে।সমসাময়িক সময়ে তিন রাষ্ট্রের কর্ণধার আমেরিকার জর্জ বুশ(জুনিয়র),ইংল্যান্ডের টনি ব্লেয়ার এবং ইসরাইলের এরিয়েল শ্যারনের সরব উপস্থিতি বইটতে দেখতে পাবো।
বেলফোর চুক্তির মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বের ইহুদিদের জন্য একটি রাষ্ট্র গঠন করা হয় ১৯৪৮ সালে।যার প্রধান পৃষ্ঠপোষকতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তৈরি করেছে মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া স্বরূপ ইসরাইলকে।মধ্যপ্রাচ্য আরব তথা মুসলমানদের মাঝে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী এক জাতের মানুষের আবাসভূমি তৈরি করাই যথেষ্ট ছিলো,শান্তিপূর্ণ পরিবেশের বিঘ্ন ঘটাবার জন্য।যেটা খুবই সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে।
আমেরিকার ইতিহাসে যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রপতি হিসেবে পরিচিত জর্জ ডব্লিউ বুশ(জুনিয়র) একবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দেশটির ক্ষমতার ভার গ্রহন করেন।অল্পদিনের ভেতরেই টুইন টাওয়ারে হামলা হয়।সেই থেকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে তার যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে তার প্রভাব এখনও রয়ে গেছে।সম্প্রতি আফগানিস্তান থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নিলো যুক্তরাষ্ট্র।
রাসায়নিক অস্ত্রের ভয়াবহতা সকলের সামনে তুলে ধরে ইরাককে যুক্তরাষ্ট্রের কব্জায় নিয়ে আসা হলো।যদিও,সেই আক্রমণে সম্মতি প্রদান করে নি জাতিসংঘ।লেখক তার প্রবন্ধতে উল্লেখ করেছেন,ইরাক হামলার আটমাস অতিক্রান্ত হলেও সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক অস্ত্রের মজুদের সন্ধান পায় নি যুক্তরাষ্ট্র।মিথ্যে তথ্যের ভিত্তিতে একটি দেশকে গুড়িয়ে দেয়া কেবল আমেরিকার পক্ষেই সম্ভব।যদিও,তারা এর পেছনে কারণ হিসেবে দেখিয়েছে- গোয়েন্দা রিপোর্ট কখনও শিওরিটি প্রদান করে না মাত্র সম্ভাবনার কথা বলে!
সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেফতার করে ৭ টি অভিযোগে আদালতে তোলা হলো।যদিও, সাদ্দাম হোসেন তার বিরুদ্ধে আনীত কোনো অভিযোগই স্বীকার করেন নি।তারপরও তার শেষরক্ষা হলো না!
দীর্ঘ পাঁচদশক সময় ধরে ফিলিস্তিনের জন্য লড়ে যাওয়া ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুও স্থান পেয়েছে বইটিতে।যে ফিলিস্তিন নিয়ে এত এত আলোচনা সেই ফিলিস্তিন কোথায় যাচ্ছে সে সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে।
পাঠক কেন বইটে হাতে তুলে নিবেন? কারণ,মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে জড়িত সকল বিষয় বইটিতে স্থান পেয়েছে। লেখক,তার অসাধারণ বিশ্লেষনী ক্ষমতাবলে প্রবন্ধগুলো রচনা করেছেন।মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে সম্মক ধারণা পেতে বইটি বিনাদ্বিধায় হাতে তুলে নেয়া যায়।অনেক তথ্যের সম্মিলন ঘটেছে বইটিতে।আমার বেশ ভালো লেগেছে,আশাকরি আপনাদেরও পছন্দের কাতারে বইটি স্থান পাবে।
১৯৪৮ সনের ১ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সনে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় দু’বছর পাকিস্তানের বন্দি শিবিরে কাটিয়ে ১৯৭৩ সনে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১৯৭৫ সনের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় ৪৬ ব্রিগেডে স্টাফ অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৭৯-৮১ সনে ঢাকায় সেনাসদরে গুরুত্বপূর্ণ পদে অপারেশন ডাইরেক্টরেট নিয়োজিত হন। পরে তিনি ব্রিগেডের অধিনায়ক হিসেবে দুটি ইনফেনট্রি ব্রিগেড ও একটি আর্টিলারি ব্রিগেডের অধিনায়ক ছিলেন। লেখক বাংলাদেশের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করে দ্বিতীয়বারের মত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিখ্যাত ইউ এস এ কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ জেনারেল কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তিনি পাকিস্তানের ন্যাশনাল ডিফেন্স এ ডি সি ইসলামাবাদ ইউনিভার্সিটির তত্ত্বাবধানে স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে মাস্টার্স এবং ২০১১ সনে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্, ঢাকা থেকে এমফিল ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি দেশী-বিদেশী বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিরাপত্তা, ভূ-রাজনীতি এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী কলাম ও বইয়ের লেখক হিসেবে অধিক পরিচিত। এ পর্যন্ত তার তেইশটি বহুল পঠিত বই প্রকাশিত হয়েছে। তা ছাড়া দেশী-বিদেশী ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনীতি এবং নির্বাচন বিষয়ে বিশ্লেষক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। ২০০৭ সনের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১২ সনের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ বছর তিনি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার রয়েছে। ২০০৮ সনের জাতীয় এবং স্থানীয় সরকারের পাঁচ হাজারের বেশি নির্বাচন অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা।
স্পষ্টবাদী হিসেবে পরিচিত তিনি একজন মিলিটারি এনালিস্ট, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, কলামিস্ট এবং নিয়মিত টক শো তে অংশগ্রহণ করেন। জুলাই অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয় এবং তিনি ১০ দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এরপর তিনি পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবেও কিছুদিন কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োজিত আছেন।