ইসলামের মূল হচ্ছে তাওহিদ। তাওহিদপন্থিদের জন্যই ঘোষিত হয়েছে জান্নাত। নিষ্কলুষ তাওহিদ নিয়ে যারা মহান প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হবে, তারা লাভ করবে সফলতা। পক্ষান্তরে যারা তাওহিদকে প্রত্যাখ্যান করবে কিংবা যাদের তাওহিদ ত্রুটিযুক্ত থাকবে, প্রতিপালকের সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার দিন তারা চরম আক্ষেপে ভুগবে এবং অবশেষে নিক্ষিপ্ত হবে অপরাধীদের আবাসস্থল জাহান্নামে।
তাওহিদের মৌলিক বিষয়াদির জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজে আইন। যেহেতু তাওহিদ সবার জন্য, তাই তাওহিদের মৌলিক জ্ঞানকে রাখা হয়েছে অত্যন্ত সহজ, সরল এবং সবার বোধগম্যরূপে। খ্রিষ্টানদের ত্রিত্ববাদের মতো জটিল কোনো সমীকরণ এতে নেই। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, পরবর্তীরা তাওহিদের মূল বিষয়ের আলোচনা কমিয়ে দিয়ে শাখাগত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অভ্যন্তরীণ চরম দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছে। ফলে মুসলিমদের ঐক্যের ভিত্তি তাওহিদকে কেন্দ্র করে অনৈক্য ও বিভেদের সূত্রপাত হয়েছে। তাই উম্মাহর এই চরম অবক্ষয়ের সময়ে পূর্ববর্তীদের বিশুদ্ধ জ্ঞানকে ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর করার কোনো বিকল্প নেই।
মহান সালাফে সালিহিনের রচনার স্বাদ এবং ঘ্রাণই আলাদা। অষ্টম শতকের মহান ইমাম ইবনু রজব রাহ.-এর রচনায় সরলভাবে উঠে এসেছে তাওহিদের চিত্র। সব শ্রেণির পাঠকদের জন্যই ইনশাআল্লাহ বইটি সুখপাঠ্য হবে। আল্লাহ তাআলা এই মহান ইমামকে উম্মাহর পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। তাওহিদের চেতনা ফের জাগ্রত হোক এ মাটিতে। তাওহিদের আলোয় আলোকিত হোক দল-মত নির্বিশেষে সকলে। দূর হয়ে যাক জাহিলিয়াতের ঘুটঘুটে অন্ধকার। তাওহিদের আলোকিত জ্ঞান-সরোবরে পাঠক, আপনাকে স্বাগতম! দীপ্ত হোন, দীপ্তি ছড়ান। আল্লাহ আপনার সহায় হন।
ইমাম ইবনে রজব আল-হাম্বলী ছিলেন একজন মুসলিম বিদ্বান। তার পুরো নাম: জাইনুদ্দীন আবুল ফারাজ আব্দুর রহমান ইবনে আহমাদ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনেুল হাসান ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আবি আল-বারাকাত মাস'উদ আস-সুলামি, আল-বাগদাদি, আল-হাম্বলী। তিনি ইবনে রজব নামেই সুপরিচিত। ইমাম ইবনে রজব জন্মগ্রহণ করেন বাগদাদে ১৩৩৫ খ্রিষ্টাব্দে (৭৩৬ হিজরি)। তার বয়স যখন পাঁচ, ইবনে রজবের পরিবার দামেস্কে স্থানান্তরিত হয় তিনি ইবনে আন-নাকীব (মৃত্যু ৭৬৯ হিজরি), আস সুবকি, আল ইরাকি (৮০৬ হিজরি), মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাইল আল খাব্বাজ এবং প্রমুখ বিদ্বানের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। ইমাম আন-নববী রহঃ কর্তৃক রচিত প্রসিদ্ধ গ্রন্থ "চল্লিশ হাদিস" এর একটি বৃহৎ ব্যাখ্যা (শরাহ) ইবনে রজব রচনা করেছিলেন (জামি' আল-উলুম ওয়াল হিকাম) যা আজ পর্যন্ত চল্লিশ হাদীছের শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যা গ্রন্থ হিসেবে সমাদৃত হয়ে আসছে। ৭৯৫ হিজরি সনের চতুর্থ রমযানের পবিত্র এক রাতে (১৩৯৩ ঈসায়ী) মৃত্যুবরণ করেন। তখন তার বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। মৃত্যুর পর দিন তার জানাযার সালাত অনুষ্ঠিত হয় এবং তাকে সমাহিত করা হয় বাব আস-সাগীর কবরস্থানে।