তাঁর রচিত প্রবন্ধের সংখ্যা প্রায় একশত পঞ্চাশ হবে। তিনি কৈশোর থেকে জীবনাবসনের পূর্ব পর্যন্ত হাত থেকে কলম ছাড়েননি। তিনি বাংলা সাহিত্য ও নাট্য নিয়ে নিজেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে নিয়োজিত রেখেছিলেন। সেলিম আল দীনের গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ গুলোর মধ্যে অল্প কিছু প্রকাশিত হয়েছে। এখনো বিচ্ছিন্ন অবস্থায় অনেক প্রবন্ধ অপ্রকাশিত রয়েছে।
নাট্যাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিম আল দীন বাংলাদেশের বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাস্তবতার নিরীখে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নৃ—গোষ্ঠীদের সমাজজীবন গবেষণার মাধ্যমে আবিষ্কার করেছেন। তিনি একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান নাট্যকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং নতুন নন জেনেরিক শিল্পধারা প্রবর্তনে সচেষ্ট ছিলেন। আমি তাঁর বিচ্ছিন্নভাবে পড়ে থাকা সল্প সংখ্যক প্রবন্ধ সংগ্রহ করেছি। এ বিষয়ে আমাকে আন্তরিক সহযোগিতা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. ইস্রাফিল আহমেদ রঙ্গণ, তাঁকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
নাট্যাচার্য অধ্যাপক ড. সেলিম আল দীনের রচিত প্রবন্ধের মধ্যে : মহাকবির নাট্য রচনার বিষয়ে, নন্দিকেশ্বরের অভিনয় দর্পণ এবং শ্রীচৈতন্যভাগবতে নাট্য প্রসঙ্গে প্রকাশ করা হলো।
অধ্যাপক ড. সেলিম আল দীন তাঁর গবেষণার মাধ্যমে হাজার বছরের বাংলা নাটক রচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি, নাট্য বিষয়ক বহু গবেষণামূলক প্রবন্ধ রচনাপূর্বক বাংলা নাটকের বছরের ইতিহাস এবং তাঁর একটি আঙ্গিক নির্মাণেও সমর্থ হন।
জন্ম : ১৮ আগস্ট ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দ। মৃত্যু : ১৪ জানুয়ারি ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দ। নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন রবীন্দ্র-উত্তর কালের বাঙলা ভাষার অন্যতম নাট্যকার । তার সৃষ্টিশীলতার কিরণচ্ছটা ভারতবর্ষসহ। ইউরােপের কোনাে কোনাে অংশে বিস্তৃত হতে চলেছে। তার নাটক অনূদিত হয়েছে ইংরেজি। ভাষাসহ সুইডিশ ভাষায় এবং একাধিকবার মঞ্চস্থ হয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও সিঙ্গাপুরে। বিশ্বসাহিত্যের ধ্রুপদী ধারায় শ্রমজীবী মানুষ এবং বাঙলার আবহমান কালের সংস্কৃতিকে সেলিম আল দীন তাঁর নাটকে মহাকাব্যিক ব্যাপ্তিদানে সমর্থ হয়েছেন। শিল্পমূল্যে তাঁর নাটক আজ বাঙলা উপন্যাস ও আধুনিক কবিতার সমপঙক্তিতে সমাসীন। বাঙলা নাট্যসাহিত্যে তিনি এক নবতর শিল্পরীতির প্রবর্তন করেছেন—দ্বৈতাদ্বৈতবাদী শিল্পরীতি। সেলিম আল দীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে যােগদান করেন। পরবর্তীকালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক ও নাট্যতত্ত্বের পূর্ণাঙ্গ বিভাগ চালু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যায়ে নাটকের পঠনপাঠনের পথিকৃৎ হিসেবে তিনি বেঁচে আছেন । মুক্তিযুদ্ধের পর নাট্য আন্দোলনের তিনি অন্যতম পুরােধা ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার ফেডারেশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ।