"মহাভারতের প্রতিনায়ক" বইয়ের ফ্লাপের লেখা: মহাভারতের বিষয় বৈচিত্র্য বিস্ময়কর। লােকচরিত্র বর্ণনে তার তুলনা মেলা ভার। হস্তিনাপুরের সিংহাসনকে কেন্দ্র করে যে-বিরাট যুদ্ধ কুরুক্ষেত্রে হয়েছিল, তার নায়ক এবং প্রতিনায়কেরা প্রত্যেকেই আত্মগুণে সমুজ্জ্বল। এ-গ্রন্থে প্রতিনায়কের অবস্থান বিধৃত। সেইসঙ্গে প্রতিপক্ষে অবস্থিতির বিচিত্র কারণ আলােচিত হয়েছে অসাধারণ যুক্তিনিষ্ঠ বিশ্লেষণে। লেখক মহাভারতীয় উদাহরণে দেখিয়েছেন প্রতিপক্ষতার ধরন সবসময় এক হয় না। বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থৈষণাও প্রতিপক্ষতা তৈরি করে। যেমন হয়েছিল কৃতবর্মার ক্ষেত্রে। এমনকী প্রতিপক্ষতা স্পষ্ট প্রকাশ না পেলেও, আপাত সমর্থনের আড়ালে কখনও ঝলসে ওঠে মনের গােপন টান— যেমন ছিল দুর্যোধনের প্রতি কৃষ্ণজ্যেষ্ঠ বলরামের। এ-গ্রন্থে, অন্যান্য প্রতিপক্ষ নায়কদের সঙ্গে বলরামের জন্যও একই পঙক্তিতে আসন রেখেছেন লেখক। তবে তাঁকে অভিহিত করেছেন উদাসীন বলে। মহাভারতের ঘটনাক্রম সুবিস্তৃত। রাজনৈতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা অন্তহীন। এ গ্রন্থে যে-চরিত্রগুলি প্রধানত আলােচিত হয়েছে, তার মধ্যে মহাভারতের জটিল সূত্রগুলি স্পষ্টতর, কারণ, অধিকারের প্রতি সৎ ও ছলনাহীন দাবির মধ্যে জট-কুটিলতা আয়ােজনের প্রয়ােজন তেমন হয় না— যা হয় অনধিকারীর আত্মপ্রতিষ্ঠার প্রয়ােজনে। যা করেছিল কৌরবপক্ষ। তবু শেষ পর্যন্ত কুরুক্ষেত্র শুধু ন্যায়-অন্যায়ের যুদ্ধ থাকেনি। এখানেই মহাভারতের চিরকালীন বাস্তবতা।
নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর জন্ম ২৩ নভেম্বর, ১৯৫০ অধুনা বাংলাদেশের পাবনায়। কৈশোর থেকে কলকাতায়। মেধাবী ছাত্র, সারা জীবনই স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা। অনার্স পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে পেয়েছেন গঙ্গামণি পদক এবং জাতীয় মেধাবৃত্তি।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃত সাহিত্যে এম-এ। স্বর্গত মহামহোপাধ্যায় কালীপদ তর্কাচার্য এবং সংস্কৃত কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অধ্যাপক বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্যের কাছে একান্তে পাঠ নেওয়ার সুযোগ পান। নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবনের সূচনা। ১৯৮১ থেকে ২০১০ পর্যন্ত অধ্যাপনা করেছেন কলকাতার গুরুদাস কলেজে। বর্তমানে মহাভারত-পুরাণকোষ সংক্রান্ত গবেষণায় ব্যাপৃত। ১৯৮৭ সালে প্রখ্যাত অধ্যাপিকা সুকুমারী ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে গবেষণা করে ডক্টরেট উপাধি পান। বিষয়— কৃষ্ণ-সংক্রান্ত নাটক। দেশি-বিদেশি নানা পত্রিকায় বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত। ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’, ‘দেশ’ ও ‘বর্তমান’ পত্রিকার নিয়মিত লেখক। প্রিয় বিষয়— বৈষ্ণবদর্শন এবং সাহিত্য। বৌদ্ধদর্শন এবং সাহিত্যও মুগ্ধ করে বিশেষভাবে। বাল্যকাল কেটেছে ধর্মীয় সংকীর্ণতার গণ্ডিতে, পরবর্তী জীবনে সংস্কৃত সাহিত্যই উন্মোচিত করেছে মুক্তচিন্তার পথ।