আলতো করে ঠ করে ‘এবার ফেরা যাক, কি কমলকলি ঠোঁট ফোলাল, চোখে পাখি মারার ছররা ছাঁড়ল অভিমানে । কিন্তু তিনি যে পক্ষীজাতীয় জীব নন তা জানে বলেই সম্ভবত, শাড়িটা গছিয়ে নিয়ে, সোজা হয়ে সরে বসল কার্যত।
—‘পৃথিবীতে সকলের জন্যেই আপনার সময় আছে, কেবল আমার জন্যে ছাড়া।'
এবার হেসে ফেললেন তিনি। অল্প আদরও করে দিলেন কমলকলিকে । হাসলে তাঁর ব্যক্তিত্বে একটা আকস্মিক অভাবিত বদল ঘটে যায়। তাঁর ধীর গম্ভীর স্বভাবের সঙ্গে এই ছেলেমানুষী শুভ্র হাসিটা ঠিক খাপ খায় না । ফলে আকর্ষণটা অবশ্য বেড়েই যায় ৷ ডান কোণের বদন্তটি সোনা বাঁধানো, ছেলে- বেলায় পোকায় ধরেছিল। তাই সহজে বেশি হাসেন না তিনি । ওই সোনা বাঁধানো দাঁতটা তাঁর লজ্জা ।
—“বাঃ, এটা কিন্তু আনফেয়ার হল। সেই আটটা থেকে সাড়ে ন'টা । আর বলছ, তোমাকে সময় দিই না?' তাঁর স্বরে একটা মাদকতা আছে। কমল- কলির ঘোর যেন কাটতে চায় না। সে ঠোঁট ফুলিয়েই থাকে, ফোটা পটে সফুলের তো।
——কেউ কোনোদিন আমাকে ভোর সাড়ে সাতটায় উঠে গড়ের মাঠে হাওয়া খেতে দেখেছে? হেন অঘটনও ঘটল তোমার জন্যে, আর তুমিই বলছ কিনা – এবার কমলের ভুবনমোহিনী হাসি ভ্রূ থেকে চিক পর্যন্ত বিচ্ছুরিত হয় ।
নবনীতা দেবসেন দক্ষিণ কলকাতায় হিন্দুস্থান পার্কে তাঁর বাবা- মা'র 'ভালবাসা'(এখনো সেখানেই বসবাস করেন) গৃহে জন্মগ্রহন করেন । পিতা নরেন্দ্র দেব ও মাতা রাধারানী দেবী সেযুগের বিশিষ্ট কবি দম্পতি। ছেলেবেলায় এক বিশেষ সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশে তিনি বড় হয়েছেন। বাংলা ও ইংরেজি ছাড়া উনি হিন্দি, ওড়িয়া, অসমীয়া, ফরাসী, জার্মান, সংস্কৃত এবং হিব্রু ভাষাগুলি পড়তে পারেন। গোখলে মেমোরিয়াল গার্লস, লেডি ব্রেবোর্ণ ও প্রেসিডেন্সি কলেজ, যাদবপুর , হার্ভার্ড, ইণ্ডিয়ানা (ব্লুমিংটন) ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা করেছেন। ১৯৭৫- ২০০২ তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপিকা ও বেশ কিছুকাল বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপেরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন। তাকে তুলনামূলক সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট অথরিটি মানা হয়। যাদবপুরে তিনি কবি বুদ্ধদেব বসু ও সুধীন্দ্রনাথ দত্তের স্নেহধন্য ছাত্রী ছিলেন। ১৯৯৯ সালে তিনি সাহিত্য একদেমি পুরস্কার পান তার আত্মজীবনী মূলক রম্যরচনা 'নটী নবনীতা' গ্রন্থের জন্যে। এছাড়াও তিনি মহাদেবী বর্মা ও ভারতীয় ভাষা পরিষদ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকেও বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৫৯ এ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'প্রথম প্রত্যয়' প্রকাশিত হয় ও প্রথম উপন্যাস 'আমি অনুপম' ১৯৭৬ এ। কবিতা, প্রবন্ধ, রম্যরচনা, ভ্রমণ কাহিনী, উপন্যাস মিলে তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৩৮। এখনো নিয়মত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখালেখি করেন। ১৯৬০ এ তিনি বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ (পরবর্তীকালে নোবেলজয়ী) অমর্ত্য সেনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ও তাদের দুই কন্যা। জ্যেষ্ঠা অন্তরা সাংবাদিক ও সম্পাদক এবং কনিষ্ঠা নন্দনা অভিনেত্রী ও সমাজকর্মী।