ভূমিকা ছোটবেলায় আমার এক নিকট আত্মীয় অগ্রজ পশু-পাখিদের সম্বন্ধে অনেক গল্প আমাকে শোনাতেন। সেইসব গল্পে পশু-পাখিরা কথা বলে, নাচে-গায়, নানারকম কারসাজি দেখায়। শিশুসুলভ সরলতা নিয়ে আমি একবার প্রশ্ন করেছিলাম, ‘পশু-পাখিরা কি মানুষের মতো কথা বলে?' কয়েক মুহূর্তের জন্য চুপ করে থেকে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘গল্পের পশু-পাখিরা বলে।' তখন তাই বুঝেছিলাম। কিন্তু পরে— অনেক কাল পরে পশু-পাখিদের কথা বলার চাবিকাঠি তো মানুষেরই হাতে। জানলাম পৌরাণিক কথায় বিষ্ণুর মৎস্য অবতার অথবা মহাপ্লাবনের অবসানে নোঅ্যার পোত থেকে পায়রা ওড়ানোর সময় থেকে আরম্ভ করে যুগে যুগে মানুষই পশু-পাখিদের মুখ দিয়ে যেমন চেয়েছে তেমনই কথা বলিয়েছে। মানুষই তাদের নিমিত্ত করে নীতিকথা প্রচার করেছে। রূপকথা বানিয়েছে। অথবা চিত্রাঙ্কন করেছে মানুষের মনের অন্তর্নিহিত উদ্ভট খেয়ালের প্রতিচ্ছবি। বলাই বাহুল্য, পশু-পাখিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের যে চালচিত্র আমরা দেখতে পাই তা অনেকাংশেই কল্পনাপ্রবণ মানুষের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিবিম্ব মাত্র। সেই পরিপ্রেক্ষিতে দেশ-বিদেশের পৌরাণিক ও লোককথার ঝুলি থেকে পশু-পাখিদের চরিত-কথার কিছু কিছু গল্প-গাথা পাঠকদের সামনে রাখলাম। প্রাথমিক পাণ্ডুলিপির পুনর্লিখন একটা শ্রমসাধ্য প্রক্রিয়া। স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেই কাজের ভার নেবার জন্য আমি আমার শিক্ষিকা ভাগনি শাশ্বতী সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ ।