সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি- উপমহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিম জাতীয় নেতা, জাতির অন্ধকার যুগের প্রধান পথ-প্রদর্শক, জাতীয় স্বার্থে সর্বস্ব ত্যাগী মহান সাধক মরহুম নওয়াব খাজা সলিমুল্লাহ বাহাদুরকে। আমরা যে দেশের নাগরিক, যে নগর আমাদের রাজধানী তার ১০০ বছর পূর্বের ইতিহাস যদি আমরা স্মরণ করি, জানার চেষ্টা করি, তবে অবশ্যই নওয়াবের মহত্ত্ব আমরা উপলব্ধি করতে সক্ষম হব।
উপমহাদেশের নির্যাতীত, নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত, লাঞ্ছিত মুসলমানদের ত্রাণকর্তা হিসেবে নওয়াবকে আল্লাহ এ ভূখণ্ডে পাঠিয়েছিলেন। তাঁর স্বল্পকালীন জীবদ্দশায় তিনি নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে হৃতসর্বস্ব, দিশেহারা, নেতৃত্বহীন মুসলমানদেরকে একই পতাকায় ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে ১৯৪৭ সালে ১ম বার এবং ১৯৭১ সালে ২য় বার আমরা চূড়ান্তভাবে স্বাধীনতা অর্জন করি।
তাঁর সময়কালে উপমহাদেশের মুসলমানদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়।
তিনি উপমহাদেশের মুসলমানদের হতাশার সমুদ্রে একটি মনোরম ও নির্ভরযোগ্য দ্বীপ গড়েন। যে দ্বীপকে কেন্দ্র করে আজকের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্ব সম্ভব হয়েছে। উপমহাদেশের, বিশেষভাবে বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্য তিনি সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শ পুরুষ ও আদর্শ মুসলমান ছিলেন। তাঁর চর্চিত আদর্শ ছিল প্রথমে নিজে সত্যিকারের জ্ঞানী মুসলমান হও, এবং নেতৃত্বের উপযুক্ত মুসলমানদের একই প্লাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ কর। সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে জাতির ১৭৫৭ পূর্ব হৃত গৌরব পূনরুদ্ধার কর ও শান্তিপূর্ণ ও অহিংস পন্থায় লক্ষ্য অর্জন কর। জাতির যদি আত্মা কল্পনা করা যায় তবে সলিমুল্লাই এ জাতির আত্মা। জাতির আত্মাকে যদি আমরা ভুলে থাকি তবে আমরা আত্মাবিহীন জড় পদার্থ ।
ড. মাে. আনােয়ার হােসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে ৩৩ বছর শিক্ষকতা করছেন। মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার আবাল্য-লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার শিক্ষা জীবনে ১৯৬৭, ১৯৬৯ এবং ১৯৭১-এ মােট তিন বার লেখাপড়া ছেড়ে সরাসরি বিপ্লবী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে যােগ দিয়েছিলেন। তাঁর ভ্রাতা কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তম-এর নেতৃত্বে সাত ভাই দুই বােনের সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও বীরত্বগাথা কিংবদন্তিতুল্য। কর্নেল তাহের ছাড়াও তার আরও তিন ভাই মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বসূচক পদক লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহী অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে কারাভ্যভূরে গােপন আদালতে জেনারেল জিয়া তার জীবনদাতা তাহেরকে বিচারের নামে প্রহসন করে ফাসি দিয়ে হত্যা করেন। সে মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ড় আনােয়ার প্রায় পাঁচ বছর কারাগারে অন্তরীণ থাকেন। নব্বই-এর গণ-অভ্যুত্থানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সামসুন্নাহার হলে ছাত্রী লাঞ্ছনার ঘটনায় তিনি বিপন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়ান ও পুলিশ কর্তৃক আহত হয়ে সাড়ে তিন মাস শয্যাশায়ী থাকেন। ড. আনােয়ার হােসেন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একজন জীববিজ্ঞানী। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কোরিয়া ও ভারতের খ্যাতিসম্পন্ন জীববিজ্ঞানীদের সাথে তিনি নানা গবেষণায় অংশ নিয়েছেন। তার গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার আমেরিকায় প্যাটেন্ট হয়েছে। তিনি ১৯৮৫ সালে জীববিজ্ঞানে শ্রেষ্ঠ প্রকাশনার জন্য ইউজিসি পুরস্কার এবং ১৯৯৩ সালে জীববিজ্ঞান গবেষণায় অবদানের জন্য বিচারপতি ইব্রাহীম স্মারক স্বর্ণপদক লাভ করেন। ২০ আগস্ট ২০০৭-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনা সদস্য কর্তৃক ছাত্র লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের পর ২৩ আগস্ট যৌথবাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তার করে। বার দিনের রিমান্ডসহ মােট পাঁচ মাস কারাবাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-ছাত্রদের এক অভূতপূর্ব শান্তিপূর্ণ ও একই সাথে প্রচণ্ড আন্দোলনের মুখে ২২ জানুয়ারি ২০০৮ সকালে দণ্ড ও বিকেলে তা মওকুফের নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে মুক্তি লাভ করে তিনি পুনরায় শিক্ষকতা জীবনে ফিরে এসেছেন। ড. আনােয়ার হােসেন বর্তমানে জীববিজ্ঞান অনুষদের নির্বাচিত ডিন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক।