ঝরে পড়া বৃষ্টির জলের মত মানব জীবনের এমন অনেক গল্প আছে, যা কাউকে কখনো বলার সুযোগ আসে না। আমরা হয়তো অনেকেই চাই, খুব করেই চাই আমাদের সন্তান, কিংবা প্রিয়জন সব সময় ভালো থাকুক। রবের অনুগত থাকুক।
কিন্তু আমরা তাদের ফেরাতে পারি না। আধুনিকতার যবনিকাপাতে তারা প্রতিনিয়তই তিমিরের আঁধারে তলিয়ে যায়। নিজের নফস ও শয়তানের ওয়াসওয়াসাতে ভুলে যায় জীবনের আসল উদ্দেশ্য।
এতকিছুর পরে যখন ব্যক্তিও বুঝতে পারে যে, আমার আর নিস্তার নেই। আমি মহামহিম রবের সেই সকল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত যাদের ব্যাপারে সুরা আসরের শুরুর দিকে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—‘সময়ের কসম! নিশ্চয়ই সমগ্র মানুষ বিপদগ্রস্ত। ’ এরপর তারা হাল ছেড়ে দেয়। ডিপ্রেশনের অতল গহ্বরে তলিয়ে যায়। তারা ভাবে আর ফেরার পথ নেই আমার।
কিন্তু হঠাৎ করেই কি যেন হয়, কোন এক অজ্ঞাত কারণবসত জীবনের সকল হিসেব-নিকেশ যেন পালটে যায়। সবকিছু নতুন লাগে। ভালো-মন্দের বিচার-বিবেচনার বোধ তীব্রভাবে অনুভব হওয়া শুরু করে। হৃদয় কোটরে বাসা বাঁধে এমন এক দিনের ভয়,যেদিন আড়াল করবার মত না মাথার ওপর আকাশ থাকবে আর না জমিনে কোন বন্ধ কক্ষের গাঢ় অন্ধকার।
অবশেষে অমানিশার ঘোর কুয়াশার চাদর ভেদ করে, বিবেকের দর্পণে প্রতিফলিত হয় হিদায়াতের। “রিফলেকশন” সেরকম-ই একজন যুবকের ফেরার গল্প নিয়ে এগিয়েছে। এরপর ধীরেধীরে সে জয় করেছে আরও বহু অন্ধকার, যা বাসা বেঁধে ছিল তারই মতন অসংখ্য মানুষের অন্তরে। কেমন করে? জানতে হলে আপনাকে বইটা অবশ্যই পড়তে হবে একবার।
এনামুল হক ইবনে ইউসুফ সমসাময়িক বাংলা কথাসাহিত্যের এক অনন্য নাম। তিনি জীবন, সম্পর্ক ও মানবমনকে গভীর দৃষ্টিতে দেখেন এবং সেই অন্তর্দৃষ্টি প্রকাশ করেন সাহিত্যিক ভঙ্গিতে। তাঁর লেখায় পাঠক খুঁজে পান জীবনের অপ্রকাশিত কান্না, ভাঙাগড়া সংসারের টানাপোড়েন, ভালোবাসার কোমলতা এবং শূন্যতার বেদনাময় রূপ। উপন্যাস জোড়াতালির সংসার-এ তিনি পারিবারিক জীবনের জটিল টানাপোড়েন, স্মৃতি ও না-পাওয়ার দীর্ঘশ্বাসকে বাস্তব অথচ কাব্যিক ভাষায় তুলে ধরেছেন। স্নেহময়ী-তে মায়ের স্নেহ, ভালোবাসা ও পারিবারিক সম্পর্কের আবেগঘন চিত্রায়ন করেছেন। আর শূন্যস্থান-এ তিনি মানবমনের নিঃসঙ্গতা, আধ্যাত্মিক অনুসন্ধান ও জীবনের দর্শনকে নতুন এক বয়ানে সাজিয়েছেন। এসব রচনার মধ্য দিয়ে তিনি পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগান—মানুষ আসলে কী খুঁজে বেড়ায়, আর শূন্যতার মাঝেই বা কোথায় তার পূর্ণতা? শুধু উপন্যাস নয়, তাঁর অনুকাব্য, অনুগল্প ও দার্শনিক গদ্যও সমানভাবে পাঠকপ্রিয়।