বাংলাদেশের পরিমণ্ডলে নাস্তিকতার বিষয়টি সম্পূর্ণ নতুন। ২০১৩ সালের শাহবাগ আন্দোলনের আগে বিষয়টি ছিল সাধারণ মানুষের কাছে অনেকটাই অপরিচিত। তারপর নানা রকম ঘটনার বাঁক পেরিয়ে এটি সর্বমহলে সমান আলোচিত-সমালোচিত হয়ে ওঠে। কিন্তু পূর্বপরিচিতির সূত্র না থাকায় তা অধিকাংশ মানুষের কাছেই অনেকটা ঘোলাটে এবং অস্পষ্ট থেকে যায়। এমনও দেখা যায়, নাস্তিক্যবাদের ঠিকা নেওয়া অকালপক্ব তরুণ বা তরুণীটিও জানে না ওর আঁকড়ে ধরা মতবাদটির আস্তিনে কী আছে। কীই-বা ওর দুই পাতা ওলটানো নাস্তিকতার আসল চেহারা। নাকি এই মতবাদটির আড়ালে সে গোপন করছে অন্য কোনো জিঘাংসীয় অভিসন্ধি—নিজের জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে বা চেতনে-অবচেতনে? আবার এমন বোধ্যতার অন্ধকার আছে নাস্তিকতার মতবাদবিরোধী সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষদের ভেতরেও। বিষয়টির দূরগম্য অলিগলির কারণেই হয়তো কারো সাথে মতের অমিল হলেই তাকে নাস্তিক আখ্যা দেওয়ার ব্যাধি আমাদের সমাজের স্বাভাবিক প্রবণতা হয়ে উঠেছে। সংযোজন-বিয়োজনের এহেন পরিস্থিতির ফলে বিষয়টিকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা শুরু থেকেই ছিল। সেই সাথে এই দেশে নাস্তিকতার আগমনের পূর্বাপর ইতিহাস, প্রেক্ষাপট, নাস্তিকতার কারণ এবং এ-দেশের নাস্তিক বা নাস্তিকতার ছদ্মাবরণে শুধু একটি ধর্মের বিদ্বেষীদের কার্যক্রম বিশ্লেষণ, তাদের প্রচার-প্রসারের কৌশল তুলে ধরা ও তৎসংশ্লিষ্ট বিবিধ বিষয়ে গবেষণাধর্মী তথ্যপূর্ণ কিছু উপস্থাপনের দায়ও অনুভূত হতো। বিবেচনাধীন সে প্রয়োজন ও অনুভবেরই মলাটবদ্ধ প্রয়াস ‘নাস্তিকতার ইতিকথা’। বইটির মনোযোগী অধ্যয়ন পাঠককে উপরিউক্ত দূরগম্যতা থেকে বের হতে সহযোগীর ভূমিকা পালন করবে।
আবদুল্লাহ আল মাসউদ এই পৃথিবীতে চোখ মেলেছেন ১৯৯২ সাল ১৬ জানুয়ারি। জন্মস্থান নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার আমিশাপাড়া ইউনিয়নের কেশারখিল গ্রামে। মক্তব গমনের মধ্য দিয়ে তার পড়ালেখার হাতেখড়ি। এরপর ক'বছর নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা। তারপর ঢাকার টিকাটুলি জামে মসজিদে অবস্থিত 'তাহফীজুল কুরআন মাদরাসায়' ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই হিফজ সমাপন করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকার বিখ্যাত ধর্মীয় বিদ্যাপীঠ যাত্রাবাড়ি বড় মাদরাসায়। সেখান থেকেই অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে তাকমীলে হাদীস সমাপন করেন এবং মাদরাসাসমূহের সম্মিলিত শিক্ষাবোর্ড 'আলহাইআতুল উলইয়া'- এর কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ১২তম স্থান অর্জন করেন। তারপর উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকেই উচ্চতর হাদীস গবেষণা বিভাগ (উলূমুল হাদীস) এবং ইসলামি আইন ও গবেষণা বিভাগ (ইফতা)-এ অধ্যয়ন সমাপ্ত করেন। লেখালেখির সাথে যুক্ত আছেন অনেকদিন ধরে। অনুবাদের পাশাপাশি প্রবন্ধ ও গবেষণাধর্মী মৌলিক রচনাতেও তিনি মনোযোগী। মৌলিক, অনূদিত ও সম্পাদিত সব মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা বিশেরও অধিক। লেখালেখির মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলিমদের খেদমতে তিনি বদ্ধপরিকর।