হাজার বছরের পুরাণ বাংলা ভাষায় লেখা বৌদ্ধ গান ও দোহা হলো মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। এগুলো মূলত বৌদ্ধ সহজিয়া ধর্মমতের অনুসারীদের রচিত মরমি বা আধ্যাত্মিক গান ও কবিতা। এর রচয়িতা হিসেবে উল্লেখযোগ্য নামগুলো হলেন— সরহাপা, লুইপা, ডোমপা, কুক্কুরীপা প্রমুখ। এরা সবাই ছিলেন সিদ্ধাচার্য, এবং তাঁরা তন্ত্রসাধনার মাধ্যমে চৈতন্যজ্ঞান অর্জনের পথে এগিয়েছিলেন।
সারমর্ম:
বৌদ্ধ গান ও দোহা গুলোর মূল বক্তব্য বা সারমর্ম হলো—
আত্মজ্ঞান বা "বোধি" অর্জনই মানুষের জীবনের আসল লক্ষ্য।
বাইরের আচার-অনুষ্ঠান নয়, অন্তরের সাধনাই সত্য সাধনা।
মোহ, মায়া, লোভ, দ্বেষ ইত্যাদি ত্যাগ করে চিত্তকে বিশুদ্ধ করতে হবে।
গুরু বা আচার্যর উপদেশ ও দিকনির্দেশনা মেনে নিজের অভ্যন্তরে সত্যকে উপলব্ধি করতে হবে।
সহজ পথেই (সাধারণ জীবনের মধ্য দিয়েই) চরম সত্য বা পরমতত্ত্বকে উপলব্ধি করা যায়, এজন্য দরকার গভীর ধ্যান, অনুশীলন ও ভক্তি।
একটি দৃষ্টান্তমূলক দোহার ব্যাখ্যা:
"চিন্তাহীন ভাবেই চিন্তার সিদ্ধি,
চিন্তিতের চিন্তা নহে চিন্তামণি"
এখানে বলা হচ্ছে— সত্য জ্ঞান বা চেতনা কোনো জটিল যুক্তি বা চিন্তায় ধরা যায় না। বরং নির্ভাবনার মধ্য দিয়েই আসল বোধ উপলব্ধি হয়।
মূল বৈশিষ্ট্য:
সহজ ভাষায় গভীর আধ্যাত্মিক চিন্তা প্রকাশ
প্রতীকী ভাষা (যেমন— পদ্ম, সুনীল গগন, অরুণ, চন্দ্র ইত্যাদি)