বিষয়বস্তু শরীর ইংরিজিতে বিষয়বস্তু কে বলে 'সাবজেক্ট ম্যাটার'। এর মধ্যে 'সাবজেক্ট' মানে যেমন উত্তমপুরুষ-চৈতন্যময় আমি, 'ম্যাটার' মানে তেমনি অচেতন জড় পদার্থ। শরীর এমনি এক জড়চেতন সংবিৎভরা হাড়মাংসচামড়ার খাঁচা যার ভিতরে বসেই আমাদের মুক্তি আলোয়, আকাশে, ধূলায় ধূলায়, ঘাসে ঘাসে।
এই শরীরের 'কালে' বিস্তৃতি জন্ম থেকে জরা, মরণ পর্যন্ত। 'দেশে' অর্থাৎ স্থানে বিস্তৃতি মাথা, হাত থেকে পা পর্যন্ত। দেহের এই জন্ম, জরা, মুখ, মগজ, কর, চরণ নিয়ে অধ্যায়ের পর অধ্যায় পেরিয়ে এই গ্রন্থে বুঝবার চেষ্টা করি এর রোগব্যাধির অনুভূতি জগৎটাকে। প্রসঙ্গক্রমে ওঠে মরণশীল এই শরীরের সৌন্দর্যের কথা। শ্রবণ-ইন্দ্রিয় দিয়ে গান শুনি যখন তখন কি শরীর ব্যবহার করে উপভোগ বা কল্পনা করছি নাকি মন বুদ্ধি দিয়ে? মন ভেতরে, শরীর বাইরে-এ ভাবে ভাবতে অভ্যস্ত আমাদের যখন পেটে ব্যথা হয়-সে ব্যথা আমি ছাড়া কেউ টের পায়না কেন? পেট তো মন নয়। পেট তো শরীর-মস্তিষ্ক যেমন শরীর-যেখানে বুদ্ধি গজায়। যাঁরা আমাদের মতো বুদ্ধি, মানে কথা বেচে খায় তারা কি দেহ বেচে খাচ্ছে? 'দেহ বিক্রী করা' বললেই আমরা গণিকা বৃত্তির কথা ভাবি অথচ রামপ্রসাদ গানে লিখেছেন, 'আমি দেহ বেচে ভাবের হাটে, দুর্গানাম কিনে এনেছি'।
আমাদের সব তপস্যা ও রোমাঞ্চের, শোকের ও শ্লোকের, ব্যাধি ও বোধের বাসা এই 'গা'-এর দর্শন আগা-পাছ-তলা আলোচিত হল এ তনু ভরিয়া: দর্শন আপাদমস্তক গ্রন্থে, পূর্বপশ্চিমের সাহিত্য ও ফিলসফির অনুষঙ্গ ছড়িয়ে।