الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَنزَلَ الأَحْكامَ لَامُضَاءِ عِلمِهِ الْقَدِيمِ، وَأَجالَ الإِنْعَام لشاكر قليله العيريم وأشهد أن لا إله إلَّا الله وحده لا شَرِيكَ لَها الرَّحِيمُ وَأَشْهَدُ أَن بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُولُهُ الْمَبْعُوثُ بِالدِّينِ القَويمِ المَنْعُوتُ بالخُلْقِ الْعَظِيمِ صلى الله
عليه وعلى آله وَصَحْبِهِ وَسَلَّمَ أَفْضَلَ الصَّلَاةِ وَالتَّسْلِيمِ أَمَا بَعْدُ কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী রহ. প্রণীত মা-লা-বুদ্দা মিনহু ফিকহ শাস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ কিতাবাদির অন্যতম। যুগ যুগ ধরে এ কিতাবটি কওমী মাদ পাঠ্য তালিকাভুক্ত হয়ে আছে ভারত উপমহাদেশে। সে ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের পাঠ্য তালিকাভুক্ত। সেই সাথে বাংলাদেশ কাওমী মাদরাসা বোর্ডের নেসাব ভুক্ত। তাই কিতাবটি আরো বেশি গুরুত্ববহ। কিতাবটি ফার্সি ভাষায় রচিত
হওয়ায় শিক্ষার্থীদের জন্য তুলনামূলক কিতাবটি কষ্টসাধ্য। তাই বাংলা ভাষা-ভাষীদের সুবিধার্থে কিতাবটি বাংলা ভাষায় ভাষান্তরিত করা হয়েছে। সেই সাথে কঠিন ও জটিল শব্দাগুলোর শব্দার্থ ও লেখা। হয়েছে এবং বোর্ড পরীক্ষার উপযোগী করে প্রশ্নোত্তর আকারে সাজানো হয়েছে। আশা করি অনুবাদ থেকে সকলেই উপকৃত হবে ব্যাপাকভাবে। বিশেষ করে কওমী পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।
পরিশেষে আল্লাহ তাআলার আলিশান দরবারে অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রার্থনা তিনি যেন আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রায়াসকে কবুল করে শাফিউল আম্বিয়া স শাফাআত নসিব করেন। বিদায় বেলা পাঠক সমীপে আরজ, শত চেষ্টার পরে ভুল থেকে যায়। এ ক্ষেত্রে আমরা আপনাদের সুপরামর্শ কামনা করছি। আন্ত আমাদের কবুল করুন। আমিন!
কাজি সানাউল্লাহ পানিপথী কাজি সানাউল্লাহ পানিপথী সম্রাট আলমগিরের সমকালীন বিশিষ্ট বুজুর্গ মির্জা মাজহার জানেজানা [রহমাতুল্লাহি আলায়হি]-এর একজন গুরুত্বপূর্ণ খলিফা ৷ তিনি শায়েখ জালাল কাবিরুল আওলিয়া পানিপথী [রহমাতুল্লাহি আলায়হি]-এর বংশধর । শায়েখ জালাল কাবিরুল আওলিয়া [রহমাতুল্লাহি আলায়হি]-এর বংশপরম্পরার ত্রয়োদশ পুরুষ হলেন হজরত উসমান [রাদিয়াল্লাহু আনহু]। তিনি নিজেও একজন সূক্ষ্মদর্শী আলেম এবং আল্লাহতায়ালার নৈকট্যপ্রাপ্ত বিশেষ বান্দা। ধর্মীয়জ্ঞান ও যুক্তিবিদ্যায় তিনি ছিলেন গভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী। ফেকাহ ও উসুলেফেকাহতে তিনি ইজতিহাদের যোগ্যতার অধিকারী ছিলেন। ‘মাবসুত’ নামক ফেকাহবিষয়ক গ্রন্থটি তাঁর অমর অবদান। এতে তিনি প্রত্যেক মাসয়ালার সূত্র ও প্রমাণ সুবিন্যস্ত ভাবে আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি মাজহাবচতুষ্টয়ের মুজতাহিদদের মতামত উল্লেখ করেছেন। তবে এ মতামত ও মাসয়ালাসমূহের মধ্যে যেগুলো তাঁর কাছে প্রবল মনে হয়েছে সেগুলোকে তিনি মাআখিজুল আকওয়া' নামে আলাদা গ্রন্থে সন্নিবেশিত করেছেন । এছাড়া ‘তাফসিরে মাজহারি' নামে আট খণ্ডের বিশাল এক তাফসিরগ্রন্থও সংকলন করেছেন। এতে তিনি প্রাচীনকালের মোফাসসিরদের মতামতের চুম্বকঅংশ এবং খোদাপ্রদত্ত অনেক নতুন নতুন ব্যাখ্যা আলোচনা করেছেন। এ ছাড়াও তাসাওউফ বিষয়ে তিনি কলম ধরেছেন। হজরত মোজাদ্দেদে আলফেসানি [রহমাতুল্লাহি আলায়হি]-এর তত্ত্বজ্ঞানসমূহের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর মেধার স্বচ্ছতা, স্বভাবের উজ্জ্বলতা, চিন্তাশক্তির প্রখরতা ও মননের নির্মলতা ছিলো বর্ণনাতীত। তিনি সমকালীন শীর্ষ বুজুর্গ হজরত মোহাম্মদ আবেদ [রহমাতুল্লাহি আলায়হি]-এর কাছ থেকে তরিকার দীক্ষালাভ করেন এবং তাঁর ‘তাওয়াজ্জুহ’ [আত্মিক দৃষ্টিদান]- এর সুবাদে ‘ফানায়ে কলবি' বা আত্মলীন অবস্থায় পৌঁছতে সক্ষম হন। এরপর শায়খের নির্দেশক্রমে হজরত মির্জা মাজহার জানেজানা [রহমাতুল্লাহি আলায়হি]- এর কাছ থেকে ফয়েজগ্রহণ করেন। তাঁর অসাধারণ দীক্ষার ছোঁয়ায় তিনি মোজাদ্দেদিয়া তরিকার স্তরসমূহ অতিক্রম করেন । মাত্র আঠারো বছর বয়সে তিনি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য উভয়প্রকার জ্ঞানার্জন শেষ করে খেলাফতলাভ করেন। এরপর তিনি ইলমের প্রসার ও ফয়েজবিতরণে নিমগ্নহয়ে পড়েন। তাঁর এ উভয়প্রকার যোগ্যতায় মুগ্ধ হয়ে শায়েখ মির্জা মাজহার জানেজানা [রহমাতুল্লাহি আলায়হি] তাঁকে sell as বা ‘হেদায়েতের নিদর্শন' উপাধি দেন। তাছাড়া মির্জা সাহেব তাঁর অনেক প্রশংসা করতেন। তিনি বলতেন, তাঁর আধ্যাত্মিক সম্পর্ক আর অধমের [আমার] আধ্যাত্মিক সম্পর্ক উচ্চতায় সমান । কিন্তু শক্তি ও প্রস্থে একটু ভিন্ন। সে আমার সহযাত্রী আর আমি হজরত শায়েখ সাইয়েদ নুর মোহাম্মদ বাদায়ুনি [রহমাতুল্লাহি আলায়হি]-এর সহগামী । আমি যে ফয়েজপ্রাপ্ত হই সেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা লাভ করে। তাঁর ভালোমন্দ আর আমার ভালোমন্দ একই সূত্রে গাথা। যদি আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন আমাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কী নিয়ে এসেছো? আমি বলবো: সানাউল্লাহ পানিপথিকে নিয়ে এসেছি! একদিন আমি [গোলাম আলি] মির্জা মাজহার সাহেবের কাছে বসা ছিলাম। সেখানে তখন জিকির ও মোরাকাবার জলসা সরগরম হয়ে ওঠেছিলো। ইতোমধ্যে কাজি সাহেব সেখানে এলেন। তাঁকে দেখে মির্জা সাহেব বললেন, 'তুমি এমন কী আমল করো যে, ফেরেশতারা তোমার সম্মানার্থে তোমাকে জায়গা দিয়ে দেয়?' এককথায়, আমি অধম [গোলাম আলি] মির্জা মাজহার জানেজানা [রহমাতুল্লাহি আলায়হি]-এর একজন পূর্ণাঙ্গ শিষ্যকে দেখেছি। মোজাদ্দেদিয়া তরিকার যেসব ফয়েজের সমাবেশ তাঁর মধ্যে ছিলো তা আমি অন্যকারো মধ্যে পাইনি । অন্তরচক্ষুসম্পন্ন বুজুর্গদের প্রকৃত অবস্থান নির্ণয় করা যদিও সম্ভব নয় কিন্তু আমি দিব্যচোখে যতোটুকু দেখেছি তার আলোকে বলতে পারি, তিনি সমকালে ছিলেন এক অনন্য ও অনুপম ব্যক্তিত্ব । শাহ আব্দুল আজিজ [রহমাতুল্লাহি আলায়হি] ও তাঁর সমকালীন অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় আলেমগণ তাঁকে ‘যুগের বায়হাকি' অভিধায় অভিহিত করতেন। তিনি আজীবন প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য উভয়প্রকার জ্ঞানচর্চার কাজ করে গেছেন। তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা ত্রিশের অধিক । ১২২৫ হিজরির রজব মাসে তিনি ইন্তেকাল করেন ।