"দিল্লি সিটি অব জ্বিনস" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: সভ্যতার বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ প্রতিনিধিত্ব করছে দিল্লিকে। বিভিন্ন সহস্রাব্দ সহঅবস্থান করছে। বিভিন্ন যুগকে মনে ধারণ করে মানুষ একই পথ ধরে হাঁটছে, একই পানি পান করছে এবং একই ধূলিতে মিশে যাচ্ছে। কিন্তু পির সদর-উদ-দীনের সাথে সাক্ষাতের পূর্ব পর্যন্ত আমি নগরীর নতুন জীবন অব্যাহত থাকার গােপন রহস্য উপলব্ধি করতে পারি নি। পির সদর-উদ-দীনের মতে দিল্লি ছিল জ্বিনদের নগরী। যদিও হামলাকারীরা বারবার এ নগরী জ্বালিয়ে দিয়েছে, শতাব্দীর পর শতাব্দী নগরী জ্বলেছে, তবু নগরী পুনঃনির্মিত হয়েছে। যেন প্রতিবার আগুন থেকে শতবর্ষজীবী মরু পাখির মতাে নগরীর উত্থান হয়েছে। ঠিক হিন্দুরা যেমন বিশ্বাস করে যে পবিত্রতা অর্জন না করা পর্যন্ত বারবার দেহের পুনর্জন্ম হবে। সেভাবেই মনে হয় যেন দিল্লি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পুনর্জন্ম লাভ করে যাবে। এর কারণ হিসেবে পির সদর-উদদীন বলেছেন যে, জ্বিনরা দিল্লিকে এতাে ভালােবাসে যে, এ নগরীকে তারা শূন্য বা বিক্ষিপ্ত দেখতে চায় না। এখন নগরীর প্রতিটি বাড়ি, রাস্তার প্রতিটি মােড়ে জ্বিনরা আছে। তাদেরকে কেউ দেখতে পায় না। কিন্তু কেউ নিবিষ্টচিত্ত হলে তাদের অনুভব করতে পারবে। তাদের ফিসফিসানি শুনতে পারবে অথবা ভাগ্য প্রসন্ন হলে মুখের উপর তাদের উষ্ণ নিশ্বাস অনুভব করতে পারবে। দিল্লিতে এসে আমার মনে হয়েছে যে, আমি একটি গ্রন্থ রচনার বিষয় খুঁজে পেয়েছি: সময়ের মাঝে অস্পষ্ট এক নগরীর চিত্র, যে নগরীর বিভিন্ন যুগ একটি পাত্রে টুকরা টুকরা হয়ে পড়ে আছে এবং যে নগরী জ্বিনদের নগরী।
জন্ম শেরপুর জেলায়, ১৯৫৪ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স। পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন ১৯৭৭ সালে। ১৯৮৩ সালে জার্মানির বার্লিনে ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ জার্নালিজম থেকে সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা লাভ করেন। তিনি বৃটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স-এর প্রথম বাংলাদেশি ফেলো হিসেবে রয়টার্স-এর বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা ও রাজনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেন ১৯৮৮-৮৯ সালে। ১৯৯২-৯৩ সালে কমনওয়েলথ টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রামের ফেলোশিপ লাভ করে ভারতীয় পার্লামেন্টের প্রশিক্ষণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্সটিটিউট অফ কন্সটিটিউশন অ্যান্ড পার্লামেন্টারি স্টাডিজ-এ সংবিধান ও পার্লামেন্টের ওপর পড়াশোনা করেন। দীর্ঘ চার দশকের পেশাজীবনে তিনি বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে তার শেষ কর্মস্থল ছিল বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)। ১৯৮৭ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জনপ্রিয় মাসিক ম্যাগাজিন 'নতুন ঢাকা জাইজেস্ট'-এর সম্পাদক ছিলেন তিনি। সাহিত্যের প্রতি অনুরাগের কারণে অনুবাদের কাজে হাত দেন এবং প্রায় তিন দশকে ৪৫টি পাঠকপ্রিয় গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন, যার মধ্যে নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক নাগিব মাহফুজ-এর কায়রো ট্রিলজি, উইজডম অফ খুফু; থেবস অ্যাট ওয়ার, আইভো অ্যানড্রিচ-এর দ্য ব্রিজ অন্য দ্য দ্রিনা, ভিএস নাইপল-এর হাফ অ্যা লাইফ, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ-এর মেমোরিজ অফ মাই মেলানকোলি হোরস, ওরহান পামুক-এর ইস্তাম্বুল: মেমোরিজ অ্যান্ড দ্য সিটি উল্লেখযোগ্য।