ফ্ল্যাপে লিখা কথা গন্ধর্ব নগরী ছাড়া এ খণ্ডের নাটকগুলোর রচনাকাল ২০০০ সালে থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত। গন্ধর্ব নগরী ১৯৭৫ সালের রচনা। নাটকটি এক অলীক নগরীর ঘটনা। কোনো এক কারণে শহরের সব মানুষ উধাও, বেঁচে আছে শুধু কয়েকজন দুষ্কৃতিকারী। দৃষ্কৃতিকারীরা এখন অসহায়, তাদর সামনে ভয়াবহ এক সময় উপস্তিত । পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাসও প্রবল।। সঙক্রান্তি এক সঙ দলের কাহিনী। মূল জীবিকা তাদের কৃষি। সঙ তাদের বিনোদন এবং প্রতিবাদের অস্ত্র। সঙের অভিনয় থেকে কিছু অর্থও আসে । নান পারিবারিক উৎসবে ফরমায়েসি সঙ্ করে থাকে তারা। এ রকম একটি অনুষ্ঠানে সঙ করতে গিয়ে সত্য কথা বলে ফেলে। এই সত্য ভাষণের ফলে বিপর্যয় নেমে আসে তাদের জীবনে। তারই এই নাটকীয় আখ্যান সঙক্রান্তি।
রাঢ়াং অর্থ জেগে উঠার জন্যে দূরাগত মাদলের ধ্বনি। আদিবাসীরা দূরাগত মাদলের ধ্বনিই শুনছে বহুকাল ধরে। কিন্তু তাদের মুক্তি নেই। ভূমির অধিকার বঞ্চিত এই আদিবাসীরা বার বার লড়াইয়ের মেতে উঠেছে। কিন্তু মুক্তি পায় নি। নাচোল বিদ্রোহ থেকে আলফ্রেড সরেনের ভূমির অধিকারের লড়াই পর্যন্ত বিস্তৃত এর কাহিনী। আলফ্রেড সরেনের উত্থান ও নিষ্ঠুর হত্যায় এর পরিসমাপ্তি। চে’র সাইকেল বীর চে’ গুয়েভারাকে নিয়ে কাব্যিক ব্যঞ্জনার এক ভ্রমণে তিনটি চরিত্র কেমন করে সমকালকে সেই সময়ের এক সূত্রে বাঁধে, তারই এক ক্রমিক প্রচেষ্টা চে’র সাইকেল।
শত্রুগণ হেনরিক ইবসেনের অমর রচনার এক বাংলা গীতিনাট্য । এই গীতিনাট্যকে সমকালের প্রেক্ষাপটে বাঁধা হয়েছে।
টার্গেট প্লাটুন পশ্চিমাধাঁচের এক গীতিনাট্য। প্রেক্ষাপট মুক্তিযুদ্ধ। কিছু তরুণ-তরুণীর মুক্তিযোদ্ধা হয়ে উঠা। তাদের বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধ, আত্নত্যাগ ও স্বপ্ন দেখার কাহিনী।
মামুনুর রশীদ বিদ্রোহ বিপ্লবের ঔরসজাত সন্তান। খরস্রোতা যমুনার স্বচ্ছ জলের মতো মেঘনা, ইছামতি, করতোয়া'র নিমগ্ন পলির মতো তাঁর লেখনি। শিল্পের জটিল কৈবল্যকে আড়ালে রেখে মায়ের মতো নিরাভরণ সংলাপে উচ্চারিত তাঁর উপলব্ধি। মা যেমন কথা বলেন, সাধারণ অতি সাধারণ ঢংয়ে স্নিগ্ধ স্নেহে ভালোবাসায়, সরলতায়। বিপরীতে সন্তান সুরক্ষায় সর্বদা সজাগ, প্রয়োজনে হাতিয়ার হাতে; তেমনি মানুষ ও সমাজ প্রহরায় বিনিদ্র তাঁর জীবন। ফসলের মাঠে অপুষ্ট শষ্যবীজ অকালে ঝরে গেলে যুদ্ধের ডাক দেয় তার কলম। ফাল্গুনের ঝরা পাতা দিয়ে তিনি গাঁথেন সাম্যের অলঙ্কার, এসবই তাঁর সৃজনের অহংকার। রাজগৃহ থেকে কুটিরের তাবৎ বৈষম্য তাঁর লেখনির বিষয়। নিজ আঙিনা থেকে বিশ্বভূগোলের সকল বঞ্চিত মানুষের ঘাম হয়ে ওঠে তাঁর কলমের কালি। তা থেকেই নির্মিত মামুনুর রশীদের নাট্যজমিন। এ জমিন সাদা ফরাসের মতো শুভ্র নয়, নয় গোলাপের পাঁপড়ির মতো কোমল। তা রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত অন্যায় অবিচার অসাম্যের ছুরিকাঘাতে। তারই বিরুদ্ধে সদা ধাবমান নাট্যমঞ্চের সেনাপতি নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ। মূলত: তিনি নাট্যকার হলেও তাঁর প্রবন্ধ, কলাম গদ্য, নাটকের সংলাপের মতোই ঝরঝরে তরতর করে পাঠককে নিয়ে যায় এক অনায়াস সাবলীল অনুভবের দিকে।