“কোথা থেকে এলাম আমি”—এ জিজ্ঞাসা মানুষের আজকের নয়; বরং হাজার হাজার বছরের। এ যাবত মানুষ এ প্রশ্নের জবাব হিসাবে যে ধারণা গড়ে তুলেছিল—তার উৎস ছিল শুধুমাত্র ধর্মীয় শিক্ষা আর দার্শনিক ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ। কিন্তু একান্ত হালে আধুনিক যুগে এসে মানুষ তার নাগালের মধ্যে। পেয়ে গেছে এমন সব তথ্য ও পরিসংখ্যান—যার দরুন মানুষ তার অরিজিন বা আদি উৎসের সমস্যা মােকাবিলায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারছে।
আজ আমরা এমন এক আধুনিক যুগে বসবাস করছি-যে যুগটা হচ্ছে যুক্তির যুগ এবং বিজ্ঞানের নবনব আবিষ্কারের যুগ। শুধু তাই নয়, এই পর্যায়ে এসে এমন দাবি করাও আজ সম্ভব হচ্ছে যে, মানুষের বুদ্ধিমত্তা যে প্রশ্নই উত্থাপন করুক না কেন এবং সে সব প্রশ্ন যত কঠিন ও যত জটিলই হােক না কেন, আধুনিক যুগের এইসব তথ্য ও যুক্তি, জ্ঞান ও বিজ্ঞানের এবংবিধ আবিষ্কার-উদ্ভাবনের সহায়তায় সে সব জিজ্ঞাসার জওয়াব প্রদান সম্ভব।
এ ব্যাপারে প্রথমেই আসে পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাবের কথা। বলা হচ্ছে, আধুনিক সেকুলার জ্ঞান-বিজ্ঞান মানুষের অরিজিন বা আদি উৎস সম্পর্কেও সঠিক ও চূড়ান্ত ধারণা প্রদানে সক্ষম। উদাহরণ হিসাবে ডারউইনের “অন দি অরিজিন অব স্পেসিস" গ্রন্থটির কথা বলা হয়। এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৬৯ সালে, ইংল্যান্ডে। সেই সময় থেকে শুরু করে পরবর্তী বহুকাল ধরে এই পুস্তকে বর্ণিত থিওরিকেই মানুষের আদি উৎস-সংক্রান্ত যাবতীয় জিজ্ঞাসার। মােক্ষম জওয়াব হিসাবে গণ্য করে আসা হচ্ছে এবং আধুনিক মানুষ নির্বিবাদে তা মেনেও নিয়েছে।
আখতার-উল-আলম রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার অন্তর্গত তাজনগর গ্রামের সম্রান্ত শাহ পরিবারের সন্তান আখতার-উল-আলম, জন্ম ১৯৩৯ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারী। পিতা শাহ আবুল কশেম, মাতা রমিছা খাতুন। জনাব আলম বলদিপুকুর প্রাইমারী স্কুল, রাণীপুকুর হাইস্কুল, রংপুর কারমাইকেল কলেজ ও ঢাকা সরকারী কলেজের ছাত্র ছিলেন এবং প্রথম ব্যাচের ছাত্র হিসাবে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। জনাব আলমের সাংবাদিকতা জীবনের সূচনা ৬০ দশকের শুরুতে বাংলাদেশের প্রাচীনতম দৈনিক আজাদে। তখন দৈনিক আজাদ গ্রুপ অব পাবলিকেশন্স-এর সুপ্রসিদ্ধ মাসিক পত্রিকা মােহাম্মদীর তিনি ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। একই সঙ্গে মাওলানা মােহাম্মদ আকরম খার তত্ত্বাবধানে তিনি দৈনিক আজাদের সম্পাদকীয় এবং কলাম লেখকের দায়িত্ব পালন করেন। মাঝখানে তিনি তাঁর সাংবাদিকতা জগতের অন্যতম ওস্তাদ মরহুম মুজিবুর রহমান খার অনুরােধে দৈনিক পয়গাম (অধুনালুপ্ত)-এর সহকারী সম্পাদক পদে যােগদান করেন। কিন্তু মাতামতের মিল না হওয়ায় তিনি সহকারী সম্পাদক ও কলামিষ্ট হিসাবে পুনরায় দৈনিক আজাদে ফিরে আসেন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মিলিটারী ক্র্যাক-ডাউনের পর তিনিই প্রথম সাংবাদিক যাকে পাকিস্তানী আর্মিরা অস্ত্রের মুখে দৈনিক আজাদ থেকে ধরে নিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দী করে রাখে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জনাব আলম দৈনিক ইত্তেফাকে সহকারী সম্পাদক হিসাবে যােগদান করেন। অল্পকালের মধ্যে ইত্তেফাকে তার স্থান-কাল-পাত্র’ কলামটি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়। ৭০ ও ৮০ দশকে লুব্ধকএর এই কলামটি ছিল এদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় কলাম । ১৯৮৫ সালে জনাব আলম ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নিযুক্ত হন। এই সময়ে ইত্তেফাক দেশে শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় পরিণত হয়। ১৯৯২ সালে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনের জন্য জনাব আলম বাহরাইন গমন করেন এবং ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত যােগ্যতার সাথে এই দায়িত্ব পালন। করেন। ইতিমধ্যে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটে। তিনি রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব ত্যাগ করে পুনরায় সংবাদিকতা পেশায় ফিরে আসেন এবং দৈনিক দিনকালের সম্পাদক হিসাবে কাজ শুরু করেন। পরে ২০০১ সালের ১লা জানুয়ারী উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি পুনরায় দৈনিক ইত্তেফাকে যােগদান করেন। সাংবাদিকতা ছাড়াও আখতার-উল্-আলম এক সময়ে নিয়মিত কবিতা, গল্প, উপন্যাস লিখতেন। সাংবাদিকতা জীবনের ফাঁকে ফাঁকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ। অনুবাদের কাজও করেছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩৩। ব্যক্তিগত জীবনে জনাব আলম জাতীয়তাবাদী আদর্শে অনুপ্রাণিত এবং উদার ইসলামিক ঐতিহ্যে সমর্পিত। পেশাগত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ জনাব আলম ডজনাধিক পুরস্কার ও পদক পেয়েছেন। এশিয়ার মধ্যে তিনি অন্যতম ব্যক্তিত্ব যিনি সাংবাদিক হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের নেবরাস্কা স্টেটের অনারারী সিটিজেনশীপ লাভ করেন ১৯৮২ সালে। ২০০০ সালে সউদী আরবের সরকারি পত্রিকা ‘সাউদী গেজেট’ তাঁকে বিশ্বের ‘ফাইভ লিডিং মুসলিম জার্নালিষ্ট'-এর একজন হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করে। জনাব আলমের স্ত্রী ডাঃ রেজিনা বেগম একজন উপ-সহকারী কমুনিটি মেডিক্যাল অফিসার রেজিনা বেগমের সাড়া জাগানাে পুস্তক ‘দি ম্যান অব দি মিডল ইস্ট ১৯৯৬ সালে লণ্ডনের মিনার্ভা প্রেস কর্তৃক প্রকাশিত হয়। তাঁদের দুই ছেলে এক মেয়ে।